যশোরে বিএনপির কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি আটকাতে পুলিশের নানা অপকৌশল

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির কারান্তরীণ নেতাকর্মীদের মুক্তি আটকাতে যশোরে পুলিশ নানা অপকৌশল শুরু করেছে। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের সাথে জড়িত নেতাকর্মীরা কারাগার থেকে যাতে সহসা মুক্তি না পান সেজন্যে একের পর এক গায়েবি মামলায় শ্যোনঅ্যারেস্ট দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কারও আদালত থেকে জামিন মিললেও কারাফটক থেকে আটক করে পুনরায় মামলা দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দলটির নেতাদের অভিযোগ, একদলীয় নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্যে বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখতে পুলিশ অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যশোরে মোট ২৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আটক আছেন। কোনো ঘটনা বা প্রমাণ ছাড়াই পুলিশ নিজেদের মতো মামলা সাজিয়ে চলমান আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের আটক করছে। অভিযোগ রয়েছে, একবার কেউ আটক হলেও সহসা তার মুক্তি মিলছে না। আর কারও জামিন হলেও তাকে ফের কারাগারের গেট থেকে ধরে নিয়ে আরেক মামলায় আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
গত সোমবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক থেকে অভয়নগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিয়ার রহমান মশিসহ ছাত্রদলের দুই নেতাকে আটক করা হয়। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দীর্ঘদিন কারান্তরীণ থাকার পর ওইদিন মশিয়ার রহমান মশিসহ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাঈম উদ্দিন বিজয় ও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় গেট থেকে পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ১৪ নভেম্বর কথিত নাশকতার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আটক দেখিয়ে তাদের আদালতে চালান দেওয়া হয়।
এদিকে গত ১২ নভেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া থেকে আটক করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবকে। আটকের পর টিএস আইয়ূবকে যশোর কোতয়ালি থানার ৩১ অক্টোবরের একটি মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। অথচ আটকের তিনদিন পর বাঘারপাড়া ও অভয়নগরের পৃথক চারটি মামলায় তাকে শ্যোনঅ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে বলে টিএস আইয়ূবের আইনজীবী আব্দুল লতিফ লতা জানান।
আব্দুল লতিফ লতা জানান, টিএস আইয়ূবকে যে মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয় সেই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পেতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই পুলিশ পুনরায় আরও চারটি মামলায় অ্যারেস্ট দেখিয়েছে। অথচ এই দুটি মামলার এজাহারে তার নাম নেই। নিছক হয়রানি ও আটকে রাখতে এমনটি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
অভয়নগর থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, টিএস আইয়ূবের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়েছে। আর গত ১৩ নভেম্বর কারাফটক থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। তাদের নওয়াপাড়া বাজার থেকে সুনির্দিষ্ট মামলায় আটক করা হয়।
এদিকে আদালত থেকে জামিনের পর কারাফটক থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক ও কারান্তরীণ নেতাদের আটকাতে পুলিশের একের পর শ্যোনঅ্যারেস্ট দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী এ অবৈধ সরকার দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে। ভিন্নমতকে দমন করতে একদিকে দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে লেলিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি আদালত থেকে জামিন পাওয়া নিরীহ মানুষকেও জেল থেকে বের হতে দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি পুলিশকে রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।