দমন পীড়নের অমানবিক কৌশল যশোরে, বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা

0

 

স্টাফ রিপোর্টার॥ সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে অমানবিক কৌশল গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। আক্রোশ দেখানো হচ্ছে বিএনপির নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। আতংকিত করে তোলা হচ্ছে পরিবারকে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ক্ষমতাসীনদের এমন নির্দয় আচরণে ইতোমধ্যে নিন্দা জানিয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন।
গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনে ‘ বিএনপিকে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছিল- “ভোটের আগে বিএনপিকে আর উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ২৮ অক্টোবর শনিবারের সংঘাতের পর বিএনপি আবারও ঘুরে দাঁড়ালে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘেœ করা যাবে না। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ-দুই দিক থেকেই কঠোরভাবে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে।”
প্রতিবেদনের উপর্যুক্ত অংশের বাস্তব প্রতিফলন ঘটছে সারা দেশে। যশোরও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। শাসক দলের সন্ত্রাসীরা একের পর দলটির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে তান্ডব চালাচ্ছে। কখনো প্রকাশ্য দিবালোকে আবার কখনো রাতের আঁধারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা করে ভাঙচুর চালাচ্ছে। বাড়িতে থাকা নারী ও শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। পুলিশের অভিযানে নেতা-কর্মীরা যখন বাড়ি ছাড়া, সেই অবস্থায় তাদের বাড়িতে চালানো হচ্ছে হামলা। এটি পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি বিমুখ করে তোলার এক ঘৃণিত অপকৌশল বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তবে এ অপকৌশল সফল হবে না বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
গত ১২ অক্টোবর যশোর শহরের মনিহার চত্বরে শ্রমিক লীগের এক জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন প্রকাশ্যে যুবলীগ-ছাত্রলীগকে আড়াই হাতের বাঁশের লাঠি তৈরির নির্দেশ দেন। তার কথার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে গেল ২৯ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচিতে। ওই কর্মসূচির দিন সকালে শহিদুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বেই শহরে প্রকাশ্যে বাঁশের লাঠি নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ভৈরব চত্বরে লাঠি মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিনব্যাপী দলটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে বাঁশের লাঠি, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, হকিস্টিক নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়।
ওই দিন সন্ত্রাসী বাহিনী শহরের ঘোপ পিলু খান সড়কের বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাসভবনে হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় ওই মহড়াকারীরা। তারা বাসভবনের প্রধান ফটক দীর্ঘ সময় ধরে ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। পরদিন ৩০ অক্টোবর সোমবার রাতে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের বাসভবনে সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। এর আগে ২৯ অক্টোবর রাতে জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা কাশিমপুর ইউনিয়নের সরুই ডাঙ্গাগ্রামে যুবদল নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করে। ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী রাশিদা রহমানের বাড়িতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বোমা হামলা করা হয়। এর আগে কারাবন্দী অভয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মতিয়ার ফারাজীর বাড়িতে গভীর রাতে বোমা হামলা করা হয়েছিল। গতকাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সম্পাদক শামীম রেজা অর্নবের পাঁচবাড়িয়াস্থ গ্রীন ক্যাফেতে পুলিশ অভিযান চালায়। দলটির নেতারা জানান, কোন কারণ ছাড়াই ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মারধর ও বের করে দিয়ে তালি লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এছাড়া তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজনকে গালিগালাজ করে আসে পুলিশ।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দল বলতে কিছুই নেই। যে কারণে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পুলিশের কাঁধে ভর করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ আওয়ামী লীগের হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালাচ্ছে। সর্বত্র গণগ্রেফতার, নির্যাতন, নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। সরকারের পতনের শেষ সময় এসে গেছে। এভাবে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে বিএনপিকে আন্দোলনের মাঠ থেকে সরানো যাবে না। আবার কোন সহিংস ঘটনা না ঘটলেও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোন কর্মকান্ড না ঘটালেও হরতাল-অবরোধে কোথাও দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ প্রতিবাদ করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। আর সেটা প্রয়োগ করার অপরাধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে? বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হবে? মা-বোনদের হুমকি-ধামকি, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ গায়ে হাত তোলা হবে ?
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, হায়রে আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ!