যশোরে চালের বস্তায় বাড়ল ১শ টাকা মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণে বাজার !

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।। সাম্প্রতিককালে মন্ত্রীদের বাজার নিয়ন্ত্রণে অপারগতার কথা অকপটে স্বীকারের পর এবার চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মজুতদাররা। একই সাথে সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর অবহেলার সুযোগটাও কাজে লাগাচ্ছে তারা। যশোরের বড় বাজারে চালের বস্তায় (২৫ কেজি) ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। এর ফলে বাড়তি টাকা গুণতে গিয়ে হিসেব মেলাতে পারছেন না ভোক্তারা। অবশ্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে এ ব্যাপারে এখনও ‘নির্দেশনা’ না পাওয়ার কথা জানায়।
১৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের কাছে নিত্যপণ্যের দাম নিযন্ত্রণ করতে না পারার কথা অকপটে স্বীকার করেন। আলু, পিঁয়াজ, ডিমের দাম কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়। এসব পণ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে। সবজির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।
এই সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেনি চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও মজুতদাররা। যশোরে দীর্ঘদিন ধরে চালের দাম স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ করেই গত ৪/৫ দিন ধরে বাজার অস্থির করে তোলে মজুতদাররা।
গতকাল শুক্রবার যশোরের বড় বাজার চালবাজারে দেখা যায়, বাংলামতি চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা। গত ৪/৫ দিন আগেও এই বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। প্রতি কেজিতে ৪ টাকা অর্থাৎ ২৫ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা দাম বাড়িয়েছে মজুতদাররা। কেজিতে ৩টাকা দাম বাড়িয়েছে বিআর-৬৩ ধানের চালে। বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আর কেজিতে ২টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট, কাজললতা, নূরজাহান ও বিআর-২৮ ধানের চাল। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, কাজললতা বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, নূরজাহান বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা আর বিআর-২৮ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে।
যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ^াস জানান, ‘যশোরে দীর্ঘদিন ধরে চালের দাম স্থিতিশীল ছিল। গত ৪/৫ দিন ধরে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘আগামী আমন ধান বাজারে না ওঠা পর্যন্ত চালের দাম আর কমার লক্ষণ নেই। তবে সে সময় মোটা স্বর্ণা ও বিআর-২৮ ধানের চালের দাম কমতে পারে। তবে চিকন চালের দাম কমবে না, বরং আরও বাড়তে পারে।’
যশোরের ঝিকরগাছায় শিশির অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শিশির কুমার সরকার শুক্রবার দৈনিক লোকসমাজকে জানান, ‘হাটে এখন পুরনো বোরো ধানের আমদানি একেবারে কমে গেছে। এ কারণে ধানের দাম বেশি। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন আমন ধান উঠে যাবে। সে পর্যন্ত চালের দাম আর কমবে না।’
যশোরের চৌগাছায় মেহেদী রাইস (হাস্কিং) মিলের স্বত্বাধিকারী শের আলী জানান, ‘বর্তমানে অটো মিলারদের হাতে প্রচুর পরিমাণে ধান মজুত আছে। মাসখানেকের মধ্যে নতুন আমন ধান বাজারে উঠে আসলে চালের দাম কমে যাবে।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীমের কাছে বড় বাজারে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে শুক্রবার এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমরা এখনও নির্দেশনা পাইনি, নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেব।’
বাজারে চাল কিনতে আসা সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামে এমনিতেই আমরা কাহিল হয়ে আছি। ওসব পণ্য কাটছাঁট করা যায়, কিন্তু প্রয়োজন মতো চাল কেনা লাগবেই।’ হঠাৎ করে দাম বাড়ার পেছনে তিনি চালের মজুতদারদের দায়ী করার পাশাপাশি সরকারের বাজার তদারকি সংস্থার গাফিলতার কথাও জানান।