স্বর্ণসহ অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানে আইন আসছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্বর্ণসহ স্থানান্তরযোগ্য বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানে নতুন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতিমধ্যেই যৌথভাবে ‘জামানত সুরক্ষা (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ২০২১’ নামে এর একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে জামানত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে এমন দশ ক্যাটাগরির অস্থাবর সম্পত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে।
খসড়া আইনে চিহ্নিত দশ ক্যাটাগরির অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছেÑ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দ্বারা সমর্থিত ও সুরক্ষিত রপ্তানির উদ্দেশ্যে বা রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য তৈরির কাঁচামাল; ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত আমানতের সনদ; স্বর্ণ-রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু যার ওজন ও বিশুদ্ধতার মান স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ দ্বারা সার্টিফাইড; নিবন্ধিত মানসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট; মেধাস্বত্ব অধিকার দ্বারা স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য (পেটেন্ট কপিরাইট); কোনো সেবার প্রতিশ্রুতি যার বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে (ওয়ার্ক অর্ডার); আসবাব-কাষ্ঠল উদ্ভিদ-ফলজ উদ্ভিদ-ওষুধি উদ্ভিদ-ইলেকট্রনিক পণ্য, সফটওয়্যার, অ্যাপস যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব; যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন; খনিজ সম্পদ (তেল, গ্যাস, হাইড্রোকার্বন ও ভূ-গর্ভস্থ মূল্যবান ধাতু) এবং যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য-প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণিসম্পদ-আয় উৎসারী জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ)।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে স্থাবর সম্পত্তি যেমনÑ জমি, বাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জামানত হিসেবে বন্ধক রেখে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ প্রাপ্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু স্থানান্তরযোগ্য বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ প্রাপ্তির কোনো বিধান না থাকায় বৈধ ভাবে ঋণ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। এ প্রেক্ষিতে প্রচলিত ঋণ/বিনিয়োগ ব্যবস্থায় স্থানাস্তরযোগ্য/অস্থাবর সম্পদকে জামানত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে অধিক মানুষের নিকট ঋণ/বিনিয়োগ সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আইনটির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে আইনটি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে এবং মোটামুটি এর একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে আইনটি চূড়ান্ত করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বর্তমানে আইনটি ‘বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষ’-এ পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক খাত সূত্রগুলো মতে, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আইন রয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের আইন বাস্তবায়ন দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ আইনটি কতটা ইতিবাচক হবেÑ এটা নির্ভর করছে আইনটির স্বচ্ছতা ও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর কার্যকর প্রয়োগের ওপর।
প্রণীতব্য আইনে যদি কোনো দুর্বলতা বা ফাঁক-ফোকর থাকে এতে প্রতারণা বেড়ে যেতে পারে এবং ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান প্রতারিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত খসড়ায় আইনটি বাস্তবায়নে একটি ‘সিকিউরড ট্রানজ্যাকশন রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের কথা বলা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত একজন রেজিস্ট্রার হবেন বোর্ডের সচিব। পরিচালনা বোর্ডের অপর সদস্যরা হবেনÑ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি, বিএসইসি চেয়ারম্যান কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি, আরজেএসসি’র রেজিস্ট্রার কিংবা তার কোনো মনোনীত প্রতিনিধি এবং মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র চেয়ারম্যান কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশোধিত খসড়ায় জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
স্বর্ণ বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের পদ্ধতি চালু রয়েছে।
এক্ষেত্রে আইনের তেমন প্রতিবন্ধকতা নেই। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে স্বর্ণের বিশুদ্ধতার আন্তর্জাতিক মানদন্ড নির্ধারণ ও গ্রহণযোগ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সার্টিফিকেট প্রদান এবং গচ্ছিত স্বর্ণ কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবেÑ সেটি নির্ধারণ করা। বাংলাদেশ ব্যাংকে এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেসব স্বর্ণ রক্ষিত আছে সেগুলো সবই আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী সার্টিফাইড। এখন যেহেতু বৈধপথে স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে, বিষয়টি সরকার ভেবে দেখতে পারে।