বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রীদের অপারগতা প্রকাশ

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।। ‘খাদ্যপণ্যের দাম আপাতত কমার সুযোগ নেই’ বাণিজ্যমন্ত্রীর স্বীকারোক্তিতে বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া হওয়ার সুযোগ পেল। তাছাড়া ‘আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না’ কৃষিমন্ত্রীর প্রকাশ্য অপারগতা প্রকাশ করায় অসাধু মজুতকারীরা বাজার নিয়ন্ত্রণে উসাহ বোধ করছে।
মন্ত্রীদের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্বীকার করায় ভোক্তারা আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। গতকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) যশোরের বড় বাজারে ভোক্তারা তাদের এমনই শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।
১৯ অক্টোবর রংপুর নগরীর লেকভিউ পার্কের নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতেই সব সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক হবে নিত্যপণ্যের বাজার। সেই সাথে রবি মৌসুমের ফসল ঘরে না আসা পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের দাম আপাতত কমার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, ৭ অক্টোবর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।
গতকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) যশোরের বড় বাজারে ক্রেতা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহমান বাণিজ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সম্প্রতি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে অপারগতার বিষয়ে বলেন, মন্ত্রীরাই যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলে সরকারের অন্যান্য নজরদারি সংস্থা তো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে। বাজার এমনিতেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তারা দুয়েকটা জরিমানা ছাড়া মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সারা দেশে কোল্ডস্টোরেজে কত আলু আছে সেগুলো পর্যালোচনা করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, এক মাস আগেই আলুর খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। অথচ এতদিন পরে এসে বলা হচ্ছে কোল্ডস্টোরেজের মজুত আলু পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজ কেজি ৬৫ টাকা ও ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা বেঁধে দিয়েছিল। এ সময়ের ব্যবধানে তা না কমে বরং আরও বেড়েছে। যেদিন সরকার দাম বেঁধে দিয়েছিল, সেদিনও বাজারে আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকা আর দেশি পোঁজ ৮০ টাকা ও ডিম সাড়ে ১২ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছিল। দাম কমার পরিবের্তে আরও বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে আলু ৫০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ডিম সাড়ে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা গোলাম রহমান বলছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম আই ওয়াশ ছাড়া কিছুই না।
এদিকে তদারকি সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য আলু, ডিম ও পেঁয়াজের পাশাপাশি সবজি ও মাছের বাজারে আগুনের তাপ ছড়াচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার খুচরা সবজি বিক্রেতা নাসির আলী ও গৌতম সাহা জানান, তারা এদিন ভালোমানের ফুলকপি ১৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, মিচুড়ি ১২০ টাকা, মুখিকচু ১০০ টাকা, করোলা ১০০ টাকা, ওল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
বড় বাজার মাছবাজারেও দামে তাপ ছড়াচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় কেজি ওজনের রুই মাছের কেজি ৩২০ টাকা, দুই কেজি ওজনের কাতল মাছের কেজি ৩২০ টাকা, ১২ টায় কেজি গলদা চিংড়ি ১১শ টাকা, ৭টায় কেজি পারশে ১ হাজার টাকা, ১২ টায় কেজি পারশে ৮শ টাকা, আকারভেদে বাইন মাছ ৮শ থেকে ১২শ টাকা, ট্যাংরা ৬৪০ টাকা, পুঁটি ৫২০ টাকা, মায়া ৩২০ টাকা, ৪ টায় কেজি তেলাপিয়া ২শটা ও পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটসহ নানা কারণে বাজারে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে সব শ্রেণির ক্রেতারা পড়েছেন ভোগান্তিতে।