গাজা যেন ভয়ানক মৃত্যুপুরী,হাসপাতাল, গণমাধ্যম কিছুই রেহাই পাচ্ছে না

0

 

লোকসমাজ ডেস্ক॥ হামাস ও ইসরায়েল সংঘাতের আটদিন পেরিয়েছে গতকাল। চলমান সংঘর্ষে বিশ্বের অন্যতম জনবসতিপূর্ণ গাজায় এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি এবং অন্যদিকে ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়ে অঞ্চলটি এক ভয়ানক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়টার্সের এক জন সাংবাদিকও রয়েছেন।
গতকাল শনিবারের আপডেটে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৭২৪ শিশু এবং ৪৫৮ নারীসহ ২ হাজার ২১৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, গাজায় আরও ৮ হাজার ৭১৪ জন নাগরিক আহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন মাত্রায় আঘাত পেয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২ হাজার ৪৫০ শিশু এবং ১ হাজার ৫৩৬ জন নারী রয়েছেন।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় গাজার হাসপাতালগুলো আহত লোকে ভরে গেছে।
ইসরায়েলের দিক থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সাংবাদিক নিহত ও আরও ছয় সাংবাদিক আহত হয়েছেন। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে ঘটনাস্থলে থাকা রয়টার্সের এক ভিডিওগ্রাফার জানিয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ওই দলটিতে আল জাজিরা ও অ্যাজস ফঁস প্রেসের (এএফপি) সাংবাদিকরাও ছিলেন। তারা লেবাননের ইসরায়েল সীমান্তের নিকটবর্তী আলমা আল শাব গ্রামের কাছে কাজ করছিলেন। সেখানে সীমান্তে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও লেবাননের মিলিশিয়া বাহিনী হিজবুল্লাহর মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলা, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়াছুড়ি চলছিল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ও হিজবুল্লাহর একজন আইনপ্রণেতা এ ঘটনার দায় ইসরায়েলকে দিয়েছেন। এ ঘটনার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “স্পষ্টতই আমরা কখনোই কর্মরত কোনো সাংবাদিককে আঘাত বা হত্যা বা গুলি করতে চাই না, কিন্তু আপনারা জানেন, আমরা একটি যুদ্ধে আছি, সেখানে এমনটি ঘটতে পারে।”
তার দেশ এ ঘটনা তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে রয়টার্স জানায়, সম্প্রচারকারীদের জন্য একটি লাইভ ভিডিও সংকেত দেওয়ার সময় সাংবাদিক ইসাম আবদুল্লাহ নিহত হন। ক্যামেরাটি একটি পাহাড়ের ঢালে স্থাপন করা হয়েছিল, তখনই বিকট এক বিস্ফোরণে ক্যামেরাটি কেঁপে ওঠে, আশপাশ ধোঁয়ায় ভরে যায় আর আর্তনাদের শব্দ শোনা যায়।
রয়টার্স বলেছে, “আমাদের ভিডিওগ্রাফার ইসাম আব্দুল্লাহ নিহত হয়েছেন জেনে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। আমরা জরুরিভিত্তিতে আরও তথ্য অনুসন্ধান করছি, ওই অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি এবং ইসামের পরিবার ও তার সহকর্মীদের পাশে আছি।”
এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার ঘোষণা করেছে, গাজা উপত্যকায় ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক সংঘাতে নিহত হয়েছে। আরও হাজার হাজার আহত লোক দিয়ে কেন্দ্রীয় হাসপাতাল ভরে গেছে।
খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসার অভাবে গাজার মানবিক সংকট চরমে। বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ। শনিবার সিএনএনের কাছে আসা ভিডিওতে বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে দেইর আল বালাহের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। হাসপাতালে জরুরি পরিষেবাগুলোকে চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজনে সকল বয়সের লোকদের স্ট্রেচার নিয়ে পাগলের মতো ছুটে আসতে দেখা গেছে।
এদিকে গাজায় স্থল অভিযানের লক্ষ্যে গাজার উত্তরে বসবাসকারী প্রত্যেককে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে স্থান ত্যাগ করার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ফিলিস্তিনিরা অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।
এমনি এক গাড়িবহরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাসের কর্মকর্তারা। শনিবার এ খবর জানায় আল জাজিরা।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেকে বাদ পড়ছে না আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল, এমনকি গণমাধ্যমের কার্যালয়ও।
গত শনিবার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা শুরুর পর ১৯টি চিকিৎসাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এর আগের দিন এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছিল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জ্বালানি–স্বল্পতার কারণে মোট ১৩টি হাসপাতালের সব কটিতে ও অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্রে আংশিক কার্যক্রম চলছে।
ডব্লিউএইচওর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টি অ্যাম্বুলেন্সও।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠান জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
গণমাধ্যমের ৪৯ কার্যালয় ধ্বংস : জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গণমাধ্যমের ৪৯টি কার্যালয় ধ্বংস হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানায়, বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া ফিলিস্তিন টাওয়ারে ছিল স্থানীয় পত্রিকা আল-আইয়াম–এর কার্যালয়ও।
বাদ পড়ছে না মসজিদ-গির্জাও : ওসিএইচএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান হামলা চালিয়ে গাজায় ১১টি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আরও সাতটি মসজিদ ও গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া গির্জাগুলো প্রাচীন বলে জানিয়েছে ইউরো-মেড।