শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি চৌগাছার সাইদুলকে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ সাইদুল ইসলাম। বয়স ৩৪। আর দশজন মানুষের মত তিনি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠেন নি। পারেন না সব ধরনের কাজ করতে। তাই চা বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন । সারাদিন চা বিক্রি করে যা রোজগার করেন তাতেই চলে চার সদস্যের সংসার। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তারপরও হাল ছাড়েন নি। সংসারের চাকা সচল রাখতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন প্রতি দিনই।
সাইদুল ইসলামের আদি বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। পিতা মৃত মফিজুর রহমান আর মা মৃত শাহিদা বেগম। জন্মের পরপরই পিতা- মা নিজ জন্মস্থান গাইবান্ধা ছেড়ে চলে আসেন চৌগাছায়। অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে উঠা সাইদুল ছোটবেলায় পিতা- মাকে হারান। তিন ভাই আর এক বোন নিয়ে ছিল সাইদুল ইসলামের সংসার। পিতা -মা মারা যাওয়ার পর ভাই -বোন বিয়ে করার পর যে যার মতই সংসার শুরু করেন। সাইদুল অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারেন নি। ছোটবেলা থেকেই শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে নানা কাজে নিজেকে সংযুক্ত করেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে না পারায় সব কাজ তার পক্ষে করে ওঠাও সম্ভব হয়না। এরই মধ্যে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বর্তমানে দুই মেয়ে সাবিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুনের জনক সাইদুল। বড় মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে সাদিয়ার বয়স আড়াই বছর। বর্তমানে সাইদুলের চার সদস্যের সংসার।

গতকাল বুধবার দুপুরে সাইদুলের চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, চার পাশেই কাস্টমার বসা। একা সাইদুলই সব কাস্টমারকে শান্ত রেখে চা বিস্কুটসহ অন্যান্য খাবার পরিবেশ করে যাচ্ছেন। এসময় কথা সাইদুল ইসলামের সাথে। সাইদুল জানান, জন্মের পর হতেই অভাব নামক দানবকে দেখে আসছি। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। সততা, নিষ্ঠা আর মানুষের ভালবাসায় নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছি। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারুন কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। চার সদস্যের পরিবারে প্রতিদিনই অনেক ব্যয়। সারাদিন চা বিক্রি করে যা রোজগার করছি তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সপ্তাহের শুক্র, সোম ও বুধবার তুলনামুলক কিছুটা বেশি বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে যা রোজগার করি আলহামদুলিল্লাহ এতেই আমি খুশি।
সাইদুলের পাশের দোকানি সবজি বিক্রেতা মো. ডাবলু বলেন, সাইদুল শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি।