মাষ কলাইয়ের ভাল ফলনের আশা চৌগাছায়

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় মাষ কলাইয়ের চাষ আশানুরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা কারণে এই ফসলের চাষ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তবে কয়েক বছর ধরে কৃষক আবার কলাই চাষে ঝুঁকেছেন। বাজারে মাষ কলাইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক লাভের আশায় চাষিরা অন্য ফসলের মত কলাই চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।
মাষ কলাই একটি ডালজাত শষ্য, দেশের নিচু এলাকা ব্যতীত অন্য সব জায়গায় এই ফসলের চাষ হয়। যশোরের চৌগাছাতে এক সময় ব্যাপক চাষ হতো মাষ ও মুগ কলাই। বলাচলে বিনা যত্ন আর অবহেলায় ফসলটি মাঠে বেড়ে উঠত। আধুনিক সভ্যতার কাছে কলাই চাষ ধীরে ধীরে হার মানতে শুরু করে। কৃষক কলাই চাষ ছেড়ে দিয়ে শুরু করে বিকল্প সব ফসলের চাষ। এক জমিতে একই ফসল দীর্ঘদিন চাষ করায় কাংখিত উৎপাদন কমে যায়। সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষক আবারও কলাই চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে কৃষকের প্রতিটি জমিতে চাষ করা মাষ কলাই এখন ফুলে ভরে উঠেছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা হলেও বৃষ্টি দীর্ঘ না হলে ক্ষতি তেমন হবে না বলে মনে করছেন কৃষক। তবে আবহাওয়া কলাই চাষের অনুকূলে থাকায় চলতি বছরে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চৌগাছাতে ১৮০ হেক্টর জমিতে মাষ কলাই চাষ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কমবেশি চাষ হলেও স্বরুপদাহ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে কলাই চাষ তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে কলাই ফুলে ভরে উঠেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করবে। চলতি মাস থেকে শুরু হবে মুগ কলাই চাষ। এ বছর ১৫০ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে মুগ কলাই চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া বর্ণী দুর্গাপুর, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের আন্দারকোটা, খড়িঞ্চাসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এ সব মাঠে কৃষক ব্যাপকভাবে কলাই চাষ করেছেন। দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ জানান, তিনি চলতি বছরে আড়াই বিঘা জমিতে মাষ কলাই চাষ করেছেন। মাত্র দেড় মাস বয়স হলেও প্রতিটি গাছ ফুলে ভরে উঠেছে। কলাই চাষে ব্যয় খুবই কম। সে কারণে কৃষক আবারও কলাই চাষ শুরু করেছেন। একই গ্রামের কৃষক মন্টু মিয়া ২ বিঘা, বিল্লাল হোসেন ৩ বিঘা, পাশের গ্রাম বর্ণীর কৃষক নজরুল ইসলাম দেড় বিঘা, তরিকুল ইসলাম ১ বিঘা, বাবু ২ বিঘা জমিতে মাষ কলাই চাষ করে সাফল্যের আশা করছেন।
চাষিরা জানান, অন্য ফসলের মত কলাই চাষে কৃষককে বেশি শ্রম দিতে হয়না। বাংলা সনের আশ্বিন মাসে কলাই বপন করা হয় এবং তিন মাসের মধ্যে তা ঘরে আসে। সার কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করলেই হয়। মাষ কলাই আর চাল কুমড়া দিয়ে শীত মৌসুমে গায়ের বধূরা ঘরে ঘরে তৈরি করেন কুমড়ো বড়ি। এই বড়ি সব বয়সের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এ জনপদের চাষিরা কলাই চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস চাষিদের নতুন ফসল উৎপাদনে সর্বদা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।