চৌগাছায় পাটের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষি

0

এম. এ. রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ চলতি মৌসুমে পাটের ফলন ভালো হলেও দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চৌগাছার চাষিরা। পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজার দর নি¤œমুখী হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুমে অনেকে পাট চাষ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর উপজেলায় জি আর ও ৫২৪ জাতের ১৮৬০ হেক্টর ও তুষা ৮ রবি জাতের ১৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জহির উদ্দীন বলেন, এবার চাষের শুরুতে চাষিদের বৈরি আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট বীজ বুনতে হয়েছে। খরার সময়ে মাঝেমধ্যে সেচ দিতে হয়। এতে পাট চাষের খরচ বেড়ে গেছে। পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলাম, ভালো জো পাইনি। তারপর বড় সমস্যা পাট জাগ দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না খানাখন্দের অভাবে, বেশির ভাগ জায়গা ভরাট হয়েছে সব খানেতেই। পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ অনেকটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন।
এদিকে উপজেলার নারায়ণপুর, পাশাপোল, ধুলিয়ানী, স্বরুপদাহ, ফুলসারা, চৌগাছা সদর ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় পাট কাটা শুরু হয়েছে। নতুন পাট হাটেও উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাট ভালো হলেও পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না। অনেকে কেটে জমিতে রেখে দিয়েছেন।
উপজেলার রাজাপুর গ্রামের চাষি আতিয়ার রহমান বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, সেচ, শ্রমিক খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট ২৫০০-২৬০০ টাকা বিক্রি হলেও, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০০-২০০০ টাকা মণ। গত বছরে এই পাট ৩০০০-৩৫০০ টাকা বিক্রি হয়। তিনি বলেন, পাটের দাম কম হলেও পাটকাঠির প্রচুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় চাষিরা খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ছোট ছোট আটি হিসেবে ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটকাটি পটল, শশা, শিম, করোলাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের মাচা তৈরিতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জ্বালানি হিসেবে গৃহবধূদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা খুব বেশি।
পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নিপা বিশ্বাস বলেন, উপজেলায় এ বছর ২৫৭৫ জন কৃষক পাট চাষ করেছেন। এ অঞ্চলে এবার পাট ভালো হয়েছে। তবে পানি ও জায়গার অভাবে পাট জাগে সমস্যা পড়েন চাষিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। সরকার পাটচাষিদেরও প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে নতুন জাতের পাটের চাষাবাদ বাড়ে। রবি-১ পাটের নতুন জাত, এরজন্য প্রণোদনা রয়েছে। পাটের দাম আপাতত কিছুটা কম হলেও খুব দ্রুত সময়ে দাম বেড়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। দাম বাড়লে কৃষক লাভবান হবে এবং ভবিষ্যতে উপজেলায় পাট চাষির সংখ্যা বাড়বে।