খুলনা বিভাগীয় বিএনপির রোডমার্চ ১৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক জুড়েই জনজোয়ার

0

আকরামুজ্জামান ॥ বিএনপি আহূত  খুলনা বিভাগের রোডমার্চে জনতার ঢল নামে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবি আদায়ে এ রোডমার্চের কর্মসূচি গ্রহণ করে দলটি।
সকাল ১০ টার দিকে ঝিনাইদহ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এ রোডমার্চ। এ সময়ে ঝিনাইদহ -মাগুরা সড়ক হয়ে যশোর-মাগুরা মহাসড়ক ধরে খুলনার দিকে যাত্রা করে এ রোডমার্চ। এ সময় ঝিনাইদহ থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক জুড়েই ছিলো জনজোয়ার। দীর্ঘ ১৪ বছরের আওয়ামী শাসনে নির্যাতিত -নিষ্পেষিত মানুষের জনস্রোত নেমে আসে মহাসড়কের দুই পাশে। মানুষের এই উদ্দীপনা ও উজ্জীবনের ঢেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। যেন জনসমুদ্রে নেমেছিলো জোয়ার। পথসভাগুলো বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসভায় রূপ নেয়।
উৎসুক সাধারণ মানুষকে এ সময় রাস্তায় দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রঙবেরঙের টি শার্ট ও ক্যাপ পরে নেতাকর্মীরা কয়েকশো পিকাপ, মিনি ট্রাক, মাইক্রোবাস, মিনিবাস ও মোটরসাইকেল যোগে রোডমার্চে অংশ নেন। পথে পথে নানা স্লোগান দেন তারা। রোডমার্চ বহরে শোভা পায় নানা প্লাকার্ড- ব্যানার ও ফেস্টুন।
মঙ্গলবার সকালে ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চটি ঝিনাইদহ, মাগুরা ও খুলনার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পথসভা শেষে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। খুলনা বিভাগের জেলাগুলো থেকে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই রোডমার্চে যোগ দেন। সকাল থেকেই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা নিয়ে রোডমার্চে যোগ দিতে ঝিনাইদহ থেকে শুরু করে খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
দুপুর আড়াইটার দিকে রোডমার্চের বিশাল গাড়ি বহর যশোর -মাগুরা সড়কের বাঘারপাড়া উপজেলার অংশে পুলেরহাটে এসে পৌঁছে। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা হাজার নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ওই এলাকা। এ সময় সেখানে দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ রোডমার্চে আগত নেতাকর্মীদের স্বাগত জানান। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
পুলের হাটের পথসভা শেষে রোডমার্চের বিশাল বহর মহাসড়ক দিয়ে যশোরের দিকে এগুতে থাকে। এ সময় পথের ধারে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ব্যানার, ফেস্টুন প্লাকার্ড নিয়ে রোডমার্চের গাড়িবহরে থাকা নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান। রাস্তার দুই ধারের মানুষের মুখে শুধু একটা কথায় উচ্চারিত হচ্ছিলো ‘ভোট চোর-ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, খালেদা জিয়ার সরকার’ ইত্যাকার স্লোগান।
বিকেলে যশোর শহরের মুড়লী মোড় এলাকায় পূর্ব নির্ধারিত এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। পথসভায় হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। সেইসাথে সরকারের অনড় অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। বিএনপির অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানোর দাবি জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মীদের রাজপথে থাকার অঙ্গীকার করান নেতারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, রোডমার্চ ঘিরে মানুষ বিজয়ের আনন্দ অনুভব করছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেলিত। আমরা নেত্রীর জন্যে তেমন কিছু করতে পারিনি। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। মুড়লী মোড়ের সমাবেশে রোডমার্চের বহর খুলনা অভিমুখে রওনা হয়ে খুলনা শহরের শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।