চৌগাছার ভৈরবের স্লুইসগেটের ভগ্নদশা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় ভৈরব নদের স্লুইসগেট রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। গেটের উপরিভাগের রেলিং অনেক আগেই ভেফু নিশ্চিহ্ন হয়েছে। তিনটি গেটের মধ্যে একটি কোন রকম সচল থাকলেও বাকি দুটির অবস্থা খুবই নাজুক। শিশুরা নিয়মিত সেখানে যাতায়াত করে। কিন্তু নেই তেমন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্থানীয়রা স্লুইসগেট দ্রুত মেরামতে জন্যে সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ও জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া হতে ভৈরব নদের মোহনা মুক্তদাহ গ্রামের কাছে এসে একত্রিত হয়ে পাঁচনামনা গ্রামের মধ্যে দিয়ে কপোতাক্ষ নদে এসে মিলিত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা ভৈরব নদ কালের বিবর্তনে হয়েছে মরা খাল। প্রায় তিন বছর আগে সরকার ভৈরব খনন করা হয়। কিন্তু আগের মত পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানান এলাকাবাসী। নদের স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ভৈরবের পানি ধরে রেখে সেখানে মাছ চাষ, কৃষি জমিতে সহজে পানি ব্যবহার করা হত। ১৯৯৩ সালে তৎকালিন বিএনপি সরকারের শাসনামলে যশোর উন্নয়নের রুপকার সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলাম স্লুইসগেট নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণের ফলে এর সুফল পেতে শুরু করেন নদ পাড়ের মানুষেরা। বিশেষ করে বষা মৌসুমে গেটের সবগুলো মুখ খুলে পানি সহজে কপোতাক্ষে বের করা যেত এবং বর্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে গেটের মুখ বন্ধ করে নদে পানি ধরে রাখা হত। পরবর্তীতে ওই পানিতে মাছ চাষসহ জমিতে সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করতেন চাষিরা। স্লুইসগেট নির্মাণের তিন দশক যেতে না যেতেই সেটি এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। গেটের গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুতেই মরিচা পড়েছে তা অকেজো হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপরিভাগে চলাচলের সুবিধার্থে রেলিং নির্মাণ করা হয়। সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। রাতের আঁধারে রেলিং ভেঙ্গে সেখান থেকে রড বের করে বিক্রি করেছে দুর্বৃত্তরা।
সরেজমিনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় কথা হয় পাঁচনামনা গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও আপেল উদ্দিনের সাথে। তারা বলেন, স্লুইসগেট নির্মাণের পরে অপরুপ এক সৌন্দর্য এখানে বিরাজ করত। দূরের অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসত। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এটি পড়ে আছে কেউ দেখতে আসেনা। স্লুইসগেটের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। বলা চলে এটি এখন অকেজো গেট। গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা খাতুন ও ফাহিমা খাতুন বলেন, স্লুইসগেটের পাশেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এছাড়া এলাকাটি জনবসতিতে ভরে উঠেছে। সময়ে অসময়ে শিশুরা ছুটে আসে এখানে। কোন রেলিং না থাকায় শিশুদের জন্য এটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নদের পানিতে গোসল করা, গৃহস্থলির কাজও করতাম কিন্তু এখন আর সে ভাবে হয়না। গ্রামের কৃষক লুকমান হোসেন বলেন, সুইচগেট সচল থাকলে ভালো হত কারণ ইচ্ছামত পানি রেখে তা কৃষি কাজে ব্যবহার করা যেত কিন্তু বর্তমানে সেটি হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, স্লুইসগেটের পশ্চিম পাশে একটি ব্রিজ আছে। ওই ব্রিজের রেলিংও দীর্ঘদিন ছিল ভাঙা। গত তিন মাসের ব্যবধানে ব্রিজ হতে পড়ে আহত হয়েছেন আলামিন (৪২), টিটো মিয়া (৪০) ও ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন (১২)। এরমধ্যে আলামিন ও টিটোর কোমরের হাড় ভেফু তারা এখন পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। স্লুইসগেটের ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা অনেকের। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাঁচনামনা গ্রামের বাসিন্দা সাহিদুল ইসলাম বলেন, স্লুইসগেট যে উদ্দেশে নির্মাণ হয়েছিল তার সুফল থেকে মানুষ এখন বঞ্চিত।। অচিরেই এটি মেরামতের জন্যে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে।