এবারও সেচ নির্ভর হচ্ছে আমন আবাদ শ্রাবণ মাসেও দেখা নেই বৃষ্টির, আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় যশোরের চাষিরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ এবারও সেচ নির্ভর হচ্ছে আমন আবাদ। শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। বিস্তীর্ণ জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আমন রোপণ শুরু হলেও যশোরাঞ্চলে এখনও কৃষকের কোনও প্রস্তুতি দেখা মিলছে না। আমনের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করলেও তা পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষক চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, সহসা বৃষ্টি না হলে কৃষককে সেচের পানি দিয়েই আমন আবাদ শুরু করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর। আর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৬৮৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে বীজতলা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর ধান রোপণ হয়েছে ১০ শতাংশ। তবে ধান রোপণের উপযুক্ত সময়ে পানির অভাবে তা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জেলার যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার কৃষক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সাধারণত বৃষ্টির পানিতেই আমন আবাদ করা হয়। বৃষ্টির পানি দিয়ে আমন ধান রোপণ করার কারণে কৃষকের খরচ সাশ্রয় হয়। তবে এ বছর আমন ধান রোপণের সময় চলে যেতে বসলেও কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ছে বলে জানান।
একই এলাকার চাষি আমজাদ আলী বলেন, সাধারণত ক্ষেতের পাট কেটে একই জমিতে আমরা আমন চাষ করে থাকি। কিন্তু এ বছর একেবারেই উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাট কেটে জাগ দেবো কোথায়, সেই কারণে এখনও ক্ষেতে পাট রয়েছে। বৃষ্টির জন্য আকাশে চেয়ে আছি কখন বৃষ্টি নামবে। এরপর পাট কেটে সেখানে ধানের চারা রোপণ করবো। তিনি বলেন, বীজতলায় ধানের চারা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সেচ দিতে হচ্ছে।
পাশেই খাজুরার লেবুতলার চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, এমনিতে সার-কীটনাশক ও শ্রমমূল্য বেশি। তারপর যদি বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিয়ে ক্ষেতে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপণ করতে হয় তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। কারণ এ বছর উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারদর মোটেও কৃষকের অনুকূলে নয়। তিনি বলেন, মাঠে গেলে মনে হচ্ছে অবিকল চৈত্র মাস। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
চাষিরা জানান, আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ় মাস থেকে শ্রাবণের মাঝমাঝি। অথচ শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহ চলে আসলেও এখনও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা না যাওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে আগাছা বেড়ে যাওয়ায় কৃষককে সেচ খরচের পাশাপাশি বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পোকার আক্রমণেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টি কোনোটাই কৃষির জন্য কাম্য নয়। এতে কৃষকের ক্ষেতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এবছর স্বাভাবিকের চেয়ে কম মৌসুমী বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক আমন আবাদ নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছেন। তবে খুব দ্রুত বৃষ্টি হলে কৃষক স্বাচ্ছন্দ্যে আমন আবাদ শেষ করতে পারবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, যশোর জেলার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ জমিতে ইতোমধ্যে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষক সেচের পানি দিয়ে হলেও তারা আমন আবাদ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।