খাদ্য মজুদে সরকারি নির্দেশনা না মানলে যাবজ্জীবন: সংসদে বিল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে নতুন বিল তোলা হয়েছে জাতীয় সংসদে।
একইসঙ্গে খাদ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে খাবারের প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে কোনো ‘কাল্পনিক নামে’ খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বিলে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল ২০২৩’ সংসদে তোলেন।
বিলটি পরীক্ষা করে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল একটিভিটি) অর্ডিন্যান্স-এর জায়গায় নতুন আইনটি করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত এ আইনের উদ্দেশ্যপূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে অভিহিত হবে। এ আইনের অধীনে কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদ সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্য মজুদ করেছিলেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই আইনের অধীনে অপরাধ হবে জামিন অযোগ্য।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পুরনো খাদ্যদ্রব্য ‘পলিশিং’ বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে বা সরকার কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহকালে সরকারি গুদামে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্য বৈধ বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করলে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য বা সরকারি গুদামের পুরাতন বা বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্নযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণগত বা গুণগত পরিবর্তন করে বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি গুদামে সরবরাহ করলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
এই বিধান অনুযায়ী, পলিশিং ও কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি মিনিকেট চাল বিক্রি ও সরবরাহ আইনত অবৈধ হবে।
কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদপ্তরের প্রদত্ত ‘বিতরণ সিল’ বা ‘বিতরণ করা হয়েছে’ এমন চিহ্নযুক্ত সিল ছাড়া সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয় করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে, তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে বা খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে।
এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশিয়ে উৎপাদন ও বিক্রি করলে সেটিও হবে অপরাধ।
লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চালালে অপরাধ হবে। এসব অপরাধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২৩’ শীর্ষক এই আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।