বাঘারপাড়ায় কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড কোনো কাজেই আসেনা কৃষকের

0

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা ॥ জমি তৈরি ও বীজ রোপণ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার প্রতিটি পর্যায়েই আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন হয় কৃষকদের। এরজন্য ২০১৭ সালে কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পূর্বাভাস জানাতে বাঘারপাড়া উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ের দেয়ালে স্থাপন করা হয় ‘কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড’। তথ্য বোর্ডে রয়েছে ছয় দিনের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগ এবং আলোকঘন্টাসহ ১০টি বিষয়ের তথ্যের ছক। আর ইউপি ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বা রেইন গজ মিটার। বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্রের ব্যাটারি চার্জ দিতে বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এই তথ্যবোর্ডের তথ্য হালনাগাদ পাওয়া যায়নি। অকেজো হয়ে রয়েছে তথ্য বোর্ডের যন্ত্রপাতি এবং বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র। যাদের জন্য এই আয়োজন সেই কৃষকই জানেন না ‘কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ডের কথা। ফলে কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে এসব তথ্য বোর্ড ও বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র কোনো কাজেই আসেনি উপজেলার কৃষকদের।
বাঘারপাড়া উপজেলার ধুপখালী গ্রামের কৃষক গোলাম খায়বার মোল্যা বলেন,‘ফসলের জন্য আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পূর্বাভাস জানা জরুরি। অনেক সময় কোনো পূর্বাভাস না পাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়। ইউনিয়ন পরিষদে আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য হালনাগাদ তথ্য ও পূর্বাভাস জানানোর ব্যবস্থা আছে আগে কখনো শুনিনি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের আওতায় ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। ইউপি ভবনের দর্শনীয় স্থানে স্থাপন করা হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার তথ্য বোর্ড। এই বোর্ডের মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোকঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আগে ও পরের তিন দিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এই বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা। তবে প্রতিটি তথ্য বোর্ড, স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনে কতো টাকা করে ব্যয় হয়েছে তার কোনো তথ্য দিতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার তথ্য উপাত্ত ডিজিটালাইজ করা, উপজেলার জলবায়ু ঝুঁকিম্যাপ তৈরির করা কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৪ হাজার ৫১টি ইউপিতে স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ ও কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড, ৪৮৭টি উপজেলায় কিয়স্ক (একটি ছোট, অস্থায়ী, একক বুথ যার মধ্যে একটি স্পর্শকাতর পর্দা) স্থাপন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় শেষ হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন করা হয়। টাকার পরিমাণ বেড়ে হয় ২১২ কোটি ৩৭ লাখ।