রাজগঞ্জে সবজির বাজারে আগুন, দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ

0

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ বছরের অন্যান্য সময় রাজগঞ্জ অঞ্চলের সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় চালান হলেও চলতি মৌসুমে তীব্র খরতাপে গাছ মরে যাওয়ায় যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের হাট-বাজারগুলোতে হঠাৎ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সকল প্রকার সবজি দাম। সেই সাথে বেড়েছে মসলাসহ ভোজ্য তেলের দাম। আর এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষ।
সোমবার (১৫ মে) উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য সবজির দোকান থাকলেও তাদের কাছে সবজি অপ্রতুল। যে কারণে হঠাৎ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রতিটা সবজির দাম। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন গত সপ্তাহে ছিল ৪০টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা কেজি দরে।
পটল প্রতি কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৪০টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা কেজি দরে। শসা গত সপ্তাহে ছিল ৩০টাকা কেজি। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা কেজি দরে। করলা গত সপ্তাহে ছিল ৬০টাকা কেজি। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০টাকা কেজি। ঢেঁড়শ গত সপ্তাহে প্রতিকেজি ছিল ৩০টাকা। চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা। বরবটি গত সপ্তাহে ছিল প্রতিকেজি ৩০টাকা। চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা। রসুন গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০টাকা দরে। বর্তমানে প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০টাকা দরে। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০টাকা কেজি দরে। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০টাকা কেজিদরে। কাঁচা মরিচ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৮০টাকা দরে। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকা কেজিদরে।
গত সপ্তাহে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হয়েছে ১৫০টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০টাকা কেজিদরে। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি দেশি চুই বিক্রি হয়েছে ৫০০টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০টাকা কেজিদরে। ভোজ্য তেল সয়াবিন গত সপ্তাহে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১৭৫টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮৪টাকা কেজি দরে। সরিষার তেল গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৯০টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ২১০টাকা কেজিদরে।
পাম তেল গত সপ্তাহে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১৩৮টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৭টাকা কেজিদরে। সুপার তেল প্রতিকেজি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৪২টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫২টাকা কেজিদরে। কেরোসিন প্রতিকেজি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা কিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০টাকা কেজিদরে। আলু গত সপ্তাহে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৩০টাকা কেজিদরে। চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫টাকা কেজিদরে।
রাজগঞ্জ বাজারের সবজি বিক্রেতা মহসিন হোসেন ও সাহেব আলী জানান, প্রচন্ড খরায় ক্ষেতে সবজি গাছ মারা যাওয়ায় ফলন অনেক কম হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ নেই বললেই চলে। যা আছে তার দামও আকাশ ছোঁয়া। ফলে অল্প পরিমাণ সবজি নিয়ে পাইকারি বাজারে কাড়াকাড়ি অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান এ দুই ব্যবসায়ী।
মশ্মিমনগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের সবজি চাষি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, চার বিঘা জমিতে সব ধরণের সবজি চাষ করা হয়েছে। কিন্তুু সম্প্রতি প্রচন্ড খরায় তার প্রায় একবিঘা জমির সবজি গাছ শুকিয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন অনেকটা কমে গেছে। আর এই উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণেই সকল প্রকারের সবজির দাম বেড়ে গেছে।
রাজগঞ্জ বাজারে বাজার করতে আসা ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের ভ্যানচালক মুন্তাজ হোসেন জানান, তার মতো গরিব মানুষের ভরসা ছিল সবজির ওপর। কিন্তুু সেই সবজির বাজার চড়া হওয়ায় বাজার করা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। এখন কি যে করব ভেবে পাচ্ছিনা বলে জানান এ খেটে খাওয়া মানুষটি।
একই গ্রামের কৃষক ওসমান আলী গাজী জানান, বাজারে কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০টাকা কেজিদরে। অথচ বাজারের নিমাই সাধুর ছেলে অসাধু ব্যবসায়ী তপু সাধু তার নিকট থেকে এককেজি কেরোসিন ২০০টাকা নিয়েছে। ওই অসাধু ব্যবসায়ী কেজিতে ৪০টাকা বেশি নেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন এ ক্রেতা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জলী রানী জানান, চলতি মৌসুমে বৃহত্তর এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নে সবজির চাষ হয়েছে এক হাজার ২০ হেক্টর জমিতে। এসকল সবজি বৃহত্তর মণিরামপুর উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্রি করা হয়। কিন্তু বর্তমান খরায় কৃষকের কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়েছে। তবে নিয়মিত সেচ দিয়ে সবজি গাছ রক্ষা ও ফলন বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।