ঝড় বৃষ্টির শংকায় ধান নিয়ে ব্যস্ততা চৌগাছার কৃষকের

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু,চৌগাছা (যশোর) ॥ আবারও ঝড় আর শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় চৌগাছায় বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। রাত দিন বিরামহীনভাবে ক্ষেত থেকে ধান কেটে ঘরে উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
শনিবার ( ২৯ এপ্রিল) উপজেলার কয়ারপাড়া, লস্কারপুর, চাঁদপুর, কুঠিপাড়াসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে বোরো ধান কাটা, বেঁধে বাড়িতে আনার কাজে ব্যস্ত কৃষক। গত তিন দিন আগে হঠাৎ বৃষ্টিপাতে কেটে রাখা ধান ভিজেছে মাঠে। সেই ধান রোদ উঠার সাথে সাথে জমিতেই শুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে কাঠফাটা রোদে কৃষক সব কষ্টকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাসের পরিশ্রমের ফসল এখন ঘরে তুলতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা অতিক্রম করেছে। উপজেলাতে উফশী- ব্রি ধান ২৮, ৫০, ৫৮, ৬৩, ৮৯, ৮৮, ৮১, ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতের ধান চাষের পাশাপাশি রড মিনিকেট ও সুভলতা, হাইব্রিড জাত তেজগোল্ড, হাইব্রিড-৩ ও ৫ জাতের ধানের চাষ হয়েছে। কিছু এলাকার মাঠে ধানে হঠাৎ করে ব্লাস্ট ভাইরাস দেখা দেয়, তারপরও এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানা গেছে।
চাঁদপুর মাঠে ধান বাড়িতে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত কৃষক গোলাম হোসেন বলেন, চলতি বছরে তিনি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেন। অর্ধেক ধান কাটার পর তা বৃষ্টিতে ভিজে যায়। সেই ধান রোদ উঠার পর জমিতে শুকিয়ে এখন বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই মাঠে ৫০ ভাগ ধান এখনও বাড়িতে নেওয়া হয়নি।
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে ধান করেছি, বৃষ্টিতে অল্প ধান ভিজে গেছে, তবে অধিকাংশ ধান মোটামুটি ভালো ভাবে বাড়িতে নিতে পেরেছি। অপর কৃষক টুটুল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ধান কাটার পর তা বৃষ্টিতে ভিজে যায়। গত কয়েক দিনে রোদে শুকিয়ে এখন বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। মেইন সড়ক হতে ধান ক্ষেতের দূরত্ব বেশি মাঠ ভিজে থাকায় সেখানে কোন বাহন যাচ্ছেনা, সে কারনে কষ্ট হলেও বোঝা বেঁধে মাথায় করে তা সড়কে এনে বাড়িতে নিতে হচ্ছে। ওহিদুল ইসলাম পেশায় ইজিবাইক চালক, তিনি এ বছর ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। ধান কাটার পর ভিজে যায়, সেই ধান শুকানোর পর পরিবারের সকলে মিলে নিজের বাহনে করে বাড়িতে নিচ্ছেন। কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, এখন বৈশাখ মাস, আকাশে মেঘ দেখলেই সব কিছু ভুলে যাচ্ছি। ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ধান ভিজেছে বৃষ্টিতে, তাই সংসারের অন্য সব কাজ ফেলে ধান বাড়িতে নিতে ব্যস্ত। কৃষাণী ফাতেমা খাতুন, আয়াতন নেছা বলেন, আমরা কৃষক, এক একটি ফসল আমাদের সামনের দিনগুলো ভালো ভাবে চলার স্বপ্ন দেখায়। সেই ফসল যদি কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে দুঃখ কষ্টের শেষ থাকে না। তাই সংসারের কর্তার সাথে আমরা সকলেই ধান গোছানোর কাজ করছি। এই ধান গোলাতে উঠার পরই শান্তি পাবো।
এ দিকে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে মাঠ ভিজে, ভিজে গেছে ধান সে কারণে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে চাষিদের। তারা বলেন, এ বছর ১ বিঘা ধানে কমপক্ষে ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। তাই সোনার ফসল ধান ঘরে আসার পর তার ন্যায্যদাম যেন থাকে সেই দাবি করেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এক দিনের বৃষ্টিতে নিচু এলাকার ধানের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে কৃষকদের জমির আইল কেটে ক্ষেত থেকে পানি বের করার পাশাপাশি পাকা ধান দ্রুত কেটে বাড়িতে আনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।