চৌগাছায় ভবন ও মার্কেটগুলো ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে

0

এম. এ. রহিম চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছা পৌর শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঝুঁকিতে রয়েছে। রিজার্ভ পানির ব্যবস্থা নেই। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অগ্নিকা- ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শহরের আবাসিক এলাকার নিরিবিলি পাড়া, আম্রকানন পাড়া, স্বর্ণপট্টি ও কাপুড়িয়াপট্টি মার্কেট। চৌগাছা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, এসব এলাকায় অগ্নি দুর্ঘটনা কিছুই করার থাকবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা শহরে ছোট বড় কয়েক হাজার ভবন রয়েছে। এসব ভবনের কোনোটিতেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের মতো ভবনের পাশে কোনো ফাঁকা জায়গা রাখেনি। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী একটি ভবনের চারপাশে ৩ মিটার পরিমাণ জায়গা খালি থাকতে হবে। এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দূরত্ব ৪ থেকে ৫ মিটার। অধিকাংশ মালিক এ আইন মানছেন না। এছাড়া শহরের ভবনগুলোতে রিজার্ভ পানির ট্যাংক, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পুকুর ছিল। পুকুরগুলো ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে ভবন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি পুকুর রয়েছে। কিন্তু তাতে নেই পানি। পৌর এলাকার মধ্যে কোথাও কোনো পানির ব্যবস্থা নেই। একমাত্র ভরসা কপোতাক্ষ নদ। সেখানেও চলছে খনন কাজ। ফায়ার সার্ভিসের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক মার্কেট ও ভবনে পানির ট্যাংক থাকতে হবে। শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনগুলোতে নেই কোনও পানির ট্যাংক। শহরে কোনও স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কপোতাক্ষ নদ থেকে পানি নিতে হয়। কপোতাক্ষ নদ থেকে পানির ব্যবস্থা করতে করতে অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। যা নিয়ন্ত্রণ করতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়।
এদিকে শহরের আম্রকানন পাড়া ও নিরিবিলি পাড়ায় শহরের সবচেয়ে বেশি আবাসিক ভবন রয়েছে। কিন্তু এ এলাকায় পায়ে হেঁটে চলা ছাড়া পানি নিয়ে প্রবেশ করার মতো কোনও রাস্তা নেই। এ জন্য উপজেলা ফায়ার সার্ভিস এই এলাকা দুটি সবচেয়ে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া তারা বলছেন শহরের স্বর্ণপট্টি ও কাপুড়িয়াপট্টি মার্কেট এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা সরকারি হাসপাতাল, থানা, উপজেলা ক্লিনিকেও অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই।
৮ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয়ের শহরের নিরিবিলি পাড়ার বাসায় আগুন লেগে লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়। ১৩ এপ্রিল শহরের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানের আম্রকানন পাড়ার বাসায় আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২৩ মার্চ শহরের চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কের ইছাপুর বটতলা মোড়ে রমজান আলী ও রিপন হোসেনের ফার্নিচারের দোকানে আগুন লেগে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
চৌগাছা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ রবিউল ইসলাম জানান, আগুন নেভানোর জন্য দক্ষ জনবল থাকলেও সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দ্রুত সময়ে পৌঁছাতে পারে না। যে সব এলাকায় পৌছাতে পারে সেখানে পানি না থাকার কারণে কিছুই করার থাকে না। চৌগাছার অধিকাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। পৌর এলাকায় পানির কোনও উৎস নেই। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পানি সরবরাহ সুবিধার জন্য পৌরসভার পানি সাপ্লাই লাইনের সাথে কমপক্ষে ১০/১৫ পয়েন্টে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রাখা জরুরি। যেখান থেকে জরুরি সময়ে ডেলিভারি হুজ লাগিয়ে খুব দ্রুত পানি নেওয়া যায়।
এ ব্যাপারে চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নুর উদ্দীন আল মামুন হিমেল বলেন, পানির সাপ্লাই লাইনের সাথে ফায়ার সার্ভিসের পানি সরবরাহের বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে। পৌরসভার পানির লাইন এখনো নির্মাণাধীন। শহরের হাসপাতাল, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, বাসস্ট্যান্ড, নিরিবিলি পাড়া, আম্রকানান পাড়া, কাঁচাবাজার, স্বর্ণপট্টি, কাপুড়িয়াপট্টি মার্কেট, ছুটিপুর বাসস্ট্যান্ডসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় খুব শিগগিরই ফায়ার সার্ভিসের পানি সরবরাহ লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া যেসব ভবন মালিকরা পৌরভার আইন মানেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।