রামপালে বৃদ্ধের জমি জাল দলিল করায় সাব- রেজিস্ট্রারসহ ৭ জনের নামে মামলা

0

রামপাল (বাগেরহাট)সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটের রামপালে মৃত্যুশয্যায় থাকা বৃদ্ধের ৬০ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে লিখে নেয়ায় সাব রেজিস্ট্রারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গত ২৭ মার্চ মামলাটি করেন বৃদ্ধ রণজিৎ কুমার পালের একমাত্র ছেলে বিশ্বজিৎ কুমার পাল। পিটিশন মামলা নং ২৫/২০২৩। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্যে বাগেরহাটের পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, রামপাল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনা, উপজেলার গিলাতলা গ্রামের দীনেশ পালের ছেলে ও ইউপি সচিব রতন কুমার পাল, তার পিতা (দলিল গ্রহিতা) দীনেশ চন্দ্র পাল, দলিললেখক ওড়াবনিয়া গ্রামের সবুজ কুমার মন্ডল, সৈয়দ গালিব জামান (ইশাদী), রতিন কুমার পাল, শনাক্তকারী রীতা রানী পাল।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৭ ফেব্র“য়ারি রামপাল সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বসে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশের মাধ্যমে দলিল গ্রহীতা দীনেশ পালের ছেলে রতন পাল দলিল লেখক সবুজ মন্ডলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে দলিলটি করান। অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হলেও বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দলিল দাতা রণজিৎ কুমার পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী। কথা হয় তার ছেলে বিশ্বজিৎ পালের সাথে। তিনি বলেন, আমার বাবার জমি ইউপি সচিব রতন কুমার পাল ও আমার সৎ মা রীতা রানী পাল সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে যোগসাজশে ভুয়া দলিল দাতা সাজিয়ে ৮৮ নং গিলাতলা মৌজার এসএ ৬৪০ খতিয়ানের ১৮৪৭ দাগের ০.৯৫ একরের মধ্যে ০.৬০ একর জমি জালিয়াতি করে লিখে নেন। যার দলিল নং ৩৪৪/২০২৩। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, তার পিতা রণজিৎ কুমার দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন। তার স্মৃতিশক্তিও লোপ পেয়েছে। অথচ তার স্থলে অন্য ব্যক্তির ছবি ও ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে মূল্যবান জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
তার গ্রামে গিয়ে কথা হয়, মনোরঞ্জন পাল, তুষার কান্তি পাল ও সুদর্শন বিশ্বাসের সাথে। তারা বলেন, রণজিৎ বাবু ৭/৮ মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তার অবস্থা খারাপ। তাকে বাইরে নেয়ার মত বা তার বের হওয়ার মত অবস্থা নেই।
অভিযুক্ত ইউপি সচিব রতন পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবুজ মহরীর সাথে ২ লাখ টাকায় চুক্তি করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে দলিল করিয়েছি। সবুজ মন্ডল সবকিছু করেছে বলে স্বীকার করেন।
অন্যতম কুশীলব সবুজ মন্ডলকে সোমবার দুপুর ১ টায় সাবরেজিস্ট্রারের মুখোমুখি করানো হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। কথিত দাতা সাজিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড ও ভুয়া ছবি ব্যবহার করে দলিল করিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউপি সচিব রতন পাল মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বিদ্যারবাহন গ্রামের মৃত যতীন্দ্র নাথ মন্ডলের ছেলে জগদীশ মন্ডলকে দাতা বানিয়ে ও ভুয়া আইডি কার্ড দিয়ে জমি দলিল করেন। সাংবাদিকরা জগদীশ মন্ডলের বাড়িতে গেলে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান।
জমি জালিয়াতি করে দলিল সম্পাদন ও বাগেরহাটের আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা হয় রামপাল উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনা’র সাথে। তার অফিসে বসে ৩৪৪/২৩ নং দলিলটি দেখতে চাইলে তিনি দলিলটি এনে দেখতে পান দলিল দাতা ও তার আইডি কার্ড জাল করা হয়েছে। উপস্থিত মহরার সমিতির নেতৃবৃন্দও বিষয়টির সত্যতা পান। এ পর্যায়ে সবুজ জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেন।
রামপাল উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনা বলেন, সরল বিশ্বাসে আমি জমির দলিল রেজিস্ট্রি করেছি। আমাকে মিসগাইড করে ভুয়া দাতা ও ভুয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।