রফতানি করে ৮৫০ কোটি টাকা আয়ের আশা কেশবপুরের মৎস্যজীবীদের

0

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর)॥ যশোরের কেশবপুরের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে মাছ রফতানি করে গত বছর আয় হয়েছে প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা। চলছি বছরে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার মাছ বিক্রির আশা করছে উপজেলা মৎস্য অফিস। এ উপজেলার ঘের ও পুকুর থেকে উৎপাদিত মাছ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ও বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। মাছ রফতানি করে এলাকার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মৎস্যচাষি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মাছের খামারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৭ হাজার ৪৪৯ হেক্টর। এছাড়া পুকুর রয়েছে ৬ হাজার ৬৪০টি। যার আয়তন প্রায় ৬৯৮ হেক্টর। গত বছর এসব জলাশয় থেকে রুই, মৃগেল, কাতল, পাবদা, বাটা, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, টাকি, কৈ, শিং, বাইন, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৩ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন সাদা মাছ উৎপাদিত হয়েছিল। এছাড়া গলদা চিংড়ি ২ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন ও বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হয় ২৪৫ মেট্রিক টন। পাশাপাশি শুটকি দেড় মেট্রিক টন ও কুঁচিয়া (কুঁচে) শূন্য দশমিক এক মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়। এ উপজেলায় সাদা মাছের চাহিদা ছিল প্রায় ৬ হাজার ১০ মেট্রিক টন। অপরদিকে ২৭ জন মাছ চাষি ৫৪ হেক্টর আয়তনের জলাশয়ে ২ দশমিক ২২ কোটি পোনা উৎপাদন করেছেন।
চলতি বছরে সাদা মাছ প্রায় ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, গলদা চিংড়ি ২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন, বাগদা চিংড়ি ২৮০ মেট্রিক টন ও শুটকি ৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
কেশবপুর শহরের পাইকারি মৎস্য আড়ৎ, কাটাখালি ও পাঁজিয়া আড়তে বিক্রি হয় উৎপাদিত এসব মাছ। এছাড়াও এর বাইরে যশোরের বারোবাজার, মণিরামপুর, কপালিয়া, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর, আঠারো মাইলসহ বিভিন্ন আড়তে মাছ পাইকারি বিক্রি করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে এসব মাছ ঢাকা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও ভারতে রফতানি করা হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এ উপজেলায় মাছ কিনতে আসেন। অপরদিকে স্থানীয়রা পাইকারি আড়ৎ থেকে মাছ কিনে খুচরো বাজারে বিক্রি করা হয়।
কেশবপুর খুচরো মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মাহাবুর রহমান জানান, আড়তের শ্রমিকদের মাধ্যমে মাছ বাজারজাতকরণের উপযোগী করে চাহিদা অনুযায়ী ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এছাড়া আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে সপ্তাহে ৫ দিন প্রায় ২০০ মণ করে মাছ ভারতে পাঠানো হয়ে থাকে।
কেশবপুর পাইকারি মৎস্য আড়তের সভাপতি আবদুল হান্নান বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন এখানকার পাইকারি আড়তের ২২ ব্যবসায়ীর কাছে বিভিন্ন ঘের ও পুকুরের প্রায় ২ হাজার মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আসে। প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ প্রতিদিন বিক্রি হয়।
উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর কবীর জানান, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের ও ৬ হাজার ৬৪০টি পুকুর রয়েছে। মাছ রফতানি করে গত বছর আয় হয়েছে প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা। চলতি বছরে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতে পারে। এ উপজেলায় মৎস্যচাষি রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। মাছের খামারে খন্ডকালীন কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তির। এছাড়া উপজেলার ৩টি মৎস্য আড়তে প্রায় ৭০০ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, চলতি বছরে এ উপজেলায় মাছ চাষের জন্যে ঘের ও পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের নীবিড় পর্যবেক্ষণ করায় মাছের উৎপাদন বেড়েছে।