প্রকল্পের পর প্রকল্প নিয়েও রেলের উন্নয়ন হচ্ছে না

0

রেলকে সচল ও লাভজনক করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের পরও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্তাদের দাবি অনুযায়ী প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও এগুলোর সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। রেল মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত এক যুগে রেলে বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলমান রয়েছে আরও বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প। তারপরও যাত্রীরা বলছেন, তাদের অর্থাৎ যাত্রীসেবার মান বাড়ছে না। উদ্বেগজনক হলো, কোনোভাবেই বাড়ছে না ট্রেনের গতি। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ রেলবহরে যুক্ত করেও আসছে না কাঙ্ক্ষিত ফল; উলটো গতি নেমে আসছে ৬০ কিলোমিটারে। বলা হচ্ছে, জরাজীর্ণ রেললাইনের কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের তথ্যমতে, ৭৩ শতাংশ ইঞ্জিন ও ৫২ শতাংশ কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ১ হাজার ৩৫০টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। গতি নেমে আসার জন্য এগুলো অনেকটাই দায়ী। সংবাদ মাধ্যম বলছে, লাইন সংস্কারে প্রতিবছর বরাদ্দ থাকে মোটা অঙ্কের অর্থ। তারপরও সেখানে লাগে না উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত ছোঁয়া। সারা দেশে বিদ্যমান রেলপথের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ এখনো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি রেলব্রিজগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। অথচ সংস্কার হচ্ছে না। গত এক যুগে রেলের উন্নয়নে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তার প্রায় ৮৫ শতাংশ অর্থই খরচ হয়েছে নতুন রেলপথ তৈরি, রেলের ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতা বাবদ। জরাজীর্ণ রেলপথ বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে বছরের পর বছর। বস্তুত ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের মিল না থাকায় এ সংস্থার লোকসান বাড়ছে লাফিয়ে। বাড়ছে দুর্নীতি। লাগাম টানতে দুই দফা ভাড়া বাড়ানো হলেও সেবার মান বাড়ছে না। এত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও কন সাধারণ যাত্রীরা এগুলোর সুফল পাচ্ছে না সে প্রশ্ন সবার। উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, সময়মতো চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ লাভের অর্থে তাদের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যেসব দেশের রেলওয়ে লাভজনক, সেসব দেশে তারা দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করেই তা করেছে। অন্যরা পারলে আমরা পারব না কেন?
সংবাদসূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান রেলপথের প্রায় ৭৫ শতাংশই বড় ধরনের মেরামত প্রয়োজন। এছাড়াও রেলে বর্তমানে অত্যাধুনিক ট্যাম্পিং মেশিনের প্রয়োজন ন্যূনতম ১৫টি। বর্তমানে সারা দেশে এ মেশিন আছে মাত্র ৪টি, যার দুটি দীর্ঘদিন অকেজো। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে হেঁটে হেঁটে রেললাইন দেখাশোনা করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলেও সার্বিকভাবে রেলের সেবার মান বাড়বে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ন দশা, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। রেলপথকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ। লোকসান ও অপচয় বন্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। চুরি-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।