‘এসো হে আমার বসন্ত

0

শিকদার খালিদ॥ রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে…নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল। দ্বার খোলো দ্বার খোলো…।’ পলাশের এই হাসি আর মধুর লোভে পাখির ছোটাছুটি জানিয়ে দিচ্ছে আজ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
বর্ষপঞ্জিতে গতকাল ছিল মাঘের শেষ দিন। ষড়্ঋতুর এদেশে প্রতি বছরের মতো প্রকৃতিতে এসেছে ফাল্গুন। বাসন্তীরাঙা বসন আর ফুলের শোভায় সেজে ঘর থেকে বেরিয়েছে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীদের মাথায় গাঁদা ফুলের রিং।
বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কারণে তিন বছর আগে থেকে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে। এর আগ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন পালিত হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। তবে ২০২০ সাল থেকে দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে পড়েছে। বাংলার বসন্তের সঙ্গে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে।
মাঘের শেষে শীতের তীব্রতা কমে বাতাসে শান্তির পরশের আবেশ মেলে। হাওয়া উদাসী মন বলে, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে..।’ ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা/ এসো হে এসো হে এসো হে আমার বসন্ত’, কবিকণ্ঠের এ প্রণতির মাহেন্দ্র লগন এলো। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমর পঙিক্ত ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত…। গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/ কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।
বসন্তের বন্দনা করে একটি পঙিক্তও লেখেননি, এমন বাঙালি কবি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভানুসিংহ ঠাকুরের উতলা চিত্তের আকুলতা এমন, ‘বসন্ত আওলরে! মধুকর গুনগুন,/ অমুয়া মঞ্জরী কানন ছাওলরে।/ মরমে বহই বসন্ত সমীরণ, মরমে ফুটই ফুল/ মরমকুঞ্জ’পর বোলই কুহুকুহু অহরহ কোকিলকুল…।’
‘ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালো…’ কবিগুরুর এই পঙিক্তমালা বসন্তেই কি সকলের বেশি মনে পড়ে? কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে…। বনে বনে রক্তরাঙা শিমুল-পলাশ, অশোক-কিংশুকে বিমোহিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে/ খুনেরা ফাগুন…।’ আবার তারই কণ্ঠে ; ‘ফাগুন এলো বুঝি মহুয়া-মালা গলে/ চরণ-রেখা তার পিয়াল-তরুতলে/ পরাগ-রাঙা চেলি অশোক দিল মেলি’…
বসন্ত বাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম গেয়ে ওঠেন :‘বসন্ত বাতাসে…সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’
সাগর, নদী, ভূভাগ গ্রীষ্মের তাপবাষ্পে নিঃশ্বাস নেবার আগে এ বসন্তের ফাল্গুনে পায় শেষ পরিতৃপ্তি। নৈসর্গিক প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বর্ণিল হয়ে ওঠে। ‘আহা আজি এ বসন্তে/ এত ফুল ফোটে এত বাঁশি বাজে এত পাখি গায়…।’
ঋতুরাজ বসন্তের আবাহন আর পশ্চিমের ভ্যালেন্টাইন ডে যেন এক বৃন্তের দুটি কুসুম। এ যেন এক সুতোয় গাঁথা দুই সংস্কৃতির এক দ্যোতনা। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব।