আলুর ফলন ভাল হলেও সংরক্ষণ ব্যয় নিয়ে ভাবনায় ব্যবসায়ী ও চাষি

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ আলু সংরক্ষণ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে যশোরের চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুত ও জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় হিমাগারের (কোল্ডস্টোরেজের) ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মালিক পক্ষ। এ অবস্থায় আলু স্টোরেজে ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সবজিসহ আলু চাষের জন্য যশোরাঞ্চল বিখ্যাত। চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১৪ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। এবছর প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হওয়ায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে ইতিমধ্যে জেলার আট উপজেলার প্রায় ৪৫ শতাংশ জমির আলু জমি থেকে তোলা হয়েছে। অন্যান্য বছরে আলু ক্ষেতে নানা রোগ দেখা দিলেও এবছর তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এরমধ্যে যশোরে ১১টি, খুলনায় ৩টি ও সাতক্ষীরায় ২টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এই কোল্ডস্টোরেজগুলোতে আলুর ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৮০ হাজার টন। বছরের মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে সাধারণত এ অঞ্চলের কোল্ডস্টোরেজগুলো খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে চাষি ও ব্যবসায়ীরা তাদের আলু কোল্ডস্টোরেজে তুলে দেয়। তবে এবছর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে কোল্ডস্টোরেজ কর্তৃপক্ষ ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে তারা কম পরিমাণ আলু সংরক্ষণ ও ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মালিক ও সংশ্লিষ্টরা।
জেলার সদর উপজেলার শাহাবাজপুর এলাকার আলু চাষি আব্দুল মজিদ জানান, এবছর আলুর ভালো ফলন হয়েছে। আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত শীত পাওয়ায় আলুর ফলন বেড়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে আলুর দাম কিছুটা থাকলেও পুরোদমে ক্ষেত থেকে তোলার পর দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে কোল্ডস্টোরেজে আলু রেখে পরবর্তীতে বিক্রি করার ইচ্ছা আছে তার। তবে এ বছর কোল্ডস্টোরেজে ভাড়া বৃদ্ধি ও বস্তার ওজন কম নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে মালিক পক্ষ। যে কারণে বাড়তি দামে কীভাবে আলু রাখবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা।
একই কথা বলেন নোঙরপুর মাঠের আলু চাষি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যশোরাঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় এ অঞ্চলের আলু চাষিরা প্রতিবছরই লোকসান গুনে আসছে। আলু চাষের ভরা মৌসুমে একশ্রেণীর সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী আগেভাগে কোল্ডস্টোরেজ দখল করে রাখে। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে সংরক্ষণ করে রাখে। এ পরিস্থিতির মধ্যে এবছর কোল্ডস্টোরেজের ভাড়া বাড়ানোর কথা বলছে স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ। এতে আলু সংরক্ষণ নিয়ে তারা চিন্তায় আছেন বলে তিনি জানান।
কোল্ডস্টোরেজ গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চের ১ তারিখ থেকে কোল্ডস্টোরেজগুলোতে আলু রাখা শুরু হবে। যেকারণে এখন স্টোরেজগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। মার্চ মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫ কেজির আলুর বস্তা রাখার জন্য ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া নেয়ার নিয়ম থাকলেও এবছর তা ২০ শতাংশেরও বেশি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মালিক পক্ষ। এ বিষয়ে মালিকদের অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
রূপদিয়া টাওয়ার কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার আকতারুজ্জামান বলেন, মার্চ মাস থেকে কোল্ডস্টোরেজে আলু রাখা শুরু হবে। এজন্য আমরা হিমাগারের সংস্কারের কাজ অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, যেহেতু বিদ্যুত ও জ্বালানির দামসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বেড়েছে, সে কারণে এবার ভাড়া বাড়বে। এ বিষয়ে মালিক পক্ষরা বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে যশোরের ঝিকরগাছার আলুর আড়ৎদার জনতা ভান্ডারের মালিক আব্দুল গফুর বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এবছর হিমাগারে ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি ওজন কম রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে স্টোর মালিকরা। এটি বাস্তবায়ন হলে আমরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো পাশাপাশি চাষি ও ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ক্ষেত বা বাজার থেকে আলু কিনে তা হিমাগার পর্যন্ত পৌঁছাতে পরিবহন খরচসহ আনুসাঙ্গিক বাড়তি খরচ গুনতে হবে আমাদের। তারপর যদি আবার ভাড়া বাড়ানো হয় এবং কম ওজনের বস্তা রাখা হয় তাহলে আমাদের পুুঁজি রক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে ভাবনায় ফেলেছে বলে তিনি জানান। বিষয়টি নিয়ে স্টোর মালিকদের সাথে আড়তদারদের পক্ষ থেকে বসা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে আলুর ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আলু ক্ষেতের যতœ নেয়ায় কোথাও আলু ক্ষেতে কোনো রোগবালাই হয়নি। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কিছু কিছু কৃষক বাড়িতেই বালু বা কাটের ঘরে বিশেষ ব্যবস্থায় আলু সংরক্ষণ করে রাখছেন। এ ব্যাপারে কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।