সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙে দেয়ার ৩ বছরেও ক্ষতিপূরণ পাননি ভবন মালিক

0

তরিকুল ইসলাম, (ঝিকরগাছা) যশোর॥ যশোরের ঝিকরগাছায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সওজ কর্তৃক একটি তিনতলা ভবন ভেঙে দেয়ার তিন বছরেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সংলগ্ন ঝুকিপূর্ণ ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে।
ভবন ভাঙার পর ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন ভবন মালিক আব্দুল্লাহিল কাফী ও তার পরিবার। শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্থ ভবন মালিকের দেয়া কাগজপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১১জুলাই সরকার পক্ষ থেকে ক্ষতি পূরণের চিঠি পেলেও গত তিন বছরেও তিনি ক্ষতি পূরণের টাকা পাননি। ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে দেখা গেছে ভবন মালিক আব্দুল্লাহিল কাফীর নাম উল্লেখ করে ৩তলা ভবনের ক্ষতি পুরণ বাবদ তাকে এক কোটি সাত লাখ আটাশি হাজার ছয়শ’ চুয়াত্তর টাকা দেওয়া হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহিল কাফী জানান, চিঠি প্রাপ্তির এক বছর পার হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে গত ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চিঠিতে উল্লিখিত এলএ কেস ০৭/২০১৭-১৮ এর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আবেদন করেন যশোরের জেল প্রশাসক বরাবর। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওই বছরের ২৯নভেম্বর তৎকালীন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমানকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন। যার স্বারক নং৩৪৭(৭)। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৪সদস্যের একটি টিম বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিদেবন প্রদান করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভূমি অধিগ্রণ কর্মকর্তা, যশোর জেলা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলার ৬৮নং কৃষ্ণনগর মৌজার ৩৮ ও ৪৭ নং খতিয়ানের ৯১১ দাগের ০.০৬ একর জমির মধ্যে ০.০০৮ একর অধিগ্রহন করা হয়েছে। উক্ত দাগের উপর অবস্থিত ভবনের দুইজন মালিক যথাক্রমে ইমদাদুল হক ও আব্দুল্লাহিল কাফী। এর মধ্যে ইমদাদুল হকের জমি অধিগ্রহন হলেও আব্দুল্লাহিল কাফীর অংশ অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে দুই জন মালিকের ভবনটি একই রুফ স্লাব বেস্টিত থাকায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া আরো উল্লেখ থাকে যে ভবনটি যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে হওয়ায় অর্ধেক ভাঙলে অপর ভবন মালিক আব্দুল্লাহিল কাফী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ও অর্ধভাঙ্গা হলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন হয়ে জানমালের ক্ষতিসাধন হবে। এ প্রতিবেদনটি ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেন তৎকালীন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক বিষয়টির আবারো তদন্তের দায়িত্ব দেন যশোর জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে। উক্ত তিন কর্মকর্তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ভবনটি ১৯৪৭ সালের পূর্বে নির্মিত এবং দুজন মালিকের ভবনটি একই রুফ স্লাব দ্বারা নির্মিত ও অবিচ্ছেদ্য। এখানে ভাঙা হলে, ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদনকারী আব্দুল্লাহিল কাফী বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং ভবনে বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। প্রতিবেদনটিও তারা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবর লিখিতভাবে ২০২১ সালের ২ জুন পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩১ মে যশোর জেলা ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা কেএম মামুনুর রশীদ বিষয়টি তদন্তপূর্বক জেলা প্রশাসককে উক্ত ভবন মালিক আব্দুল্লাহিল কাফীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন সমূহ দেখে তার ক্ষতিপূরণের বিষয়য়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান। এত গুলো সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন, ভূমি অধিগ্রহন ২০১৭ সালের ২১নং আইন এর ১৫নং কলাম বাংলাদেশ গেজেটে স্পষ্ট উল্লেখ থাকায় ভবন মালিক আব্দুল্লাহিল কাফী ক্ষতিপূরনের টাকা পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলের সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।