যশোরে যুব ও ছাত্রদলের কর্মসূচিতে বাধা দিতে পুলিশের মারমুখী আচরণ, সাংবাদিকদের হেনস্তা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে জাতীয়তাবদী যুবদল ও ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ। কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি বিনাউস্কানিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের আটক এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। যুবদল ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের দুর্ব্যবহারের শিকার সাংবাদিকদের অভিযোগ, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন ও কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য  শনিবার সংগঠন দুটির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ঘিরে এমন মারমুখি আচরণ করে। তাদের এমন কর্মকান্ডে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
আদালত কর্তৃক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশের প্রতিবাদে জেলা যুবদল দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং জেলা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। এ খবরে সকাল থেকে লাল দিঘিপাড়স্থ জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির দুটি প্রবেশ পথ পুলিশ লোহার ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। জেলা বিএনপি কার্যালয়সহ গোটা এলাকা বিপুল সংখ্যক পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুরের পর দলীয় কার্যালয় পোশাকধারী পুলিশের সাথে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও অংশ নেয়। বেলা ৩ টার পর থেকে দলীয় কার্যালয়ের আশপাশের ভবনের নিচে দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় হঠাৎ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন ও কোতায়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম গাড়ির হুইসেল বাজাতে বাজাতে লালদিঘি পাড়ে আসেন। এসেই তারা উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পাশের একটি ভবনের নিচে বসা নেতা-কর্মীদের আটকের নির্দেশ দেন। সাথে সাথে বিপুলসংখ্যক পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এসময় বেশ কয়েকজনকে নেতা-কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় লোকসমাজ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ রানা বাবু ও বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ ২৪ ক্যামেরা পার্সন হিমেল পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে পুলিশ তাদের সাথে মারমুখি আচরণ করে। লোকসাজ পত্রিকার রিপোর্টার মাসুদ রানা বাবুকে তথ্য সংগ্রহের সময় সাদা পোশাকের পুলিশ আটকে রাখে। কয়েকবার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তাকে গাড়ি ওঠানো চেষ্টা করে। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন পোশাকাধারী পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয় হেনস্তাকারীরা। বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ ২৪ ক্যামেরা পার্সন হিমেল নেতাকর্মীদের আটকের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করতে গেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইনের সামনে ওসি তাজুল ইসলাম তার সাথে মারমুখি আচরণ করেন। ভিডিও ধারণের কৈফিয়ত চেয়ে ওসি ওই ক্যামেরাপার্সনকে বলেন, আপনি ক্যামেরা চালাচ্ছেন পুলিশের অনুমতি নিয়েছেন ? সাংবাদিকতা ফলাবেন পুলিশের অনুমতি নিয়ে ফলাবেন। এই কথা বলে তিনি ক্যামেরা থেকে ভিডিও মুছে দিতে বাধ্য করেন। সংবাদ পেয়ে প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সিনিয়ির সহ-সভাপতি আনোয়ারুল কবির নান্টু ও বর্তমান সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন ও ওসি তাজুল ইসলাম তখন বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এদিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও জেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেন। দলীয় কার্যালয়ে পুলিশের এমন তান্ডবের পর জেলা ছাত্রদল শহরের আর এন রোড এলাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করে। সেখান থেকেও বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ বলেন, দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বিনাউস্কানিতে ন্যাক্কারজনকভাবে ৩৫ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের এমন মারমুখি আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে আটক আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানাচ্ছি।  কোতায়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।