ইরফান হত্যাকার পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা যুবলীগ ক্যাডার আব্দুল কাদের আটক

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের খড়কি ধোপাপাড়ায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইরফান ফারাজী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা যুবলীগ ক্যাডার আব্দুল কাদেরকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। গত সোমবার রাতে শহরের রেলগেট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এছাড়া হত্যার চুক্তি নেয়া সন্ত্রাসী পাখির মা জবেদা বেগমকেও একই রাতে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। ছেলেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করাসহ জামকাপড় পুড়িয়ে আলামত নষ্ট করার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। ডিবি পুলিশ বলছে, আটক আব্দুল কাদের নিজেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ যশোর জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দাবি করেছেন।
এছাড়া গত ২৮ আগস্ট বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওপর যশোর শহরে দড়াটানায় গাড়িতে ও তার বাড়িতে হামলাকারী সরকার দলীয় ক্যাডারদের এক জন অভিযুক্ত আব্দুল কাদের।

যুবলীগ ক্যাডার আব্দুল কাদের এভাবে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি বহর ও বাস ভবনে হামলা করে

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও যুবলীগের পদপ্রত্যাশী আনোয়ার হোসেন বিপুলের ক্যাডার হিসেবে সে পরিচিত। আটক আব্দুল কাদের চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টি এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে। তাদের আসল বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়িয়া গ্রামে। অপরদিকে জবেদা বেগম চাঁচড়া রায়পাড়ার মৃত লিয়াকত হোসেনের স্ত্রী। মঙ্গলবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে এর মধ্যে আব্দুল কাদের ১৬৪ ধারায় ইরফান ফারাজী হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রেলগেট এলাকা থেকে ইরফান ফারাজী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা আব্দুল কাদেরকে তারা আটক করা হয়। হত্যা মিশনে অংশ নেয়া তাওহিদ র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে এ খবর জানতে পেয়ে আব্দুল কাদের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেরে তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তিনি বলেন, একই রাতে তারা চাঁচড়া রায়পাড়ার বাড়ি থেকে হত্যা মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসী পাখির মা জবেদা বেগমকে আটক করেছেন। ছেলেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা ও হত্যার সময় ব্যবহৃত তার রক্তমাখা জামাকাপড় পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।
ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, আটক আব্দুল কাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, খড়কি ধোপাপাড়ার হাফিজুর রহমান ওরফে ছোট হাফিজ এবং আব্দুল কাদের একই সাথে রাজনীতি করেন। সেই সুবাদে আব্দুল কাদেরের সাথে ছোট হাফিজের স্ত্রী শাহিনা আক্তারের পরিচয়। শাহিনা আক্তার পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের স্থানীয় নেত্রী। পরিচয়ের এক পর্যায়ে শাহিনা আক্তারকে আব্দুল কাদের জানান যে, স্বাস্থ্য বিভাগে ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে তার ক্ষমতাধর লোক আছে। টাকা দিলে তিনি এই দুই সরকারি দফতরে লোকজনকে চাকরি পাইয়ে দিতে পারেন। বিষয়টি শাহিনা আক্তার নিজ এলাকার চাকরি প্রত্যাশী ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইরফান ফারাজীকে জানালে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট ইরফান ফারাজী ও আব্দুল কাদেরের মধ্যে ৪ লাখ টাকার একটি লিখিত চুক্তিনামা হয়। তবে আব্দুল কাদের দাবি করেছেন, ৪ লাখ টাকার চুক্তি হলেও তিনি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এর মধ্যে মধ্যস্থকারী শাহিনা আক্তারকে ৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়, ইরফান ফারাজীকে স্বাস্থ্য বিভাগ অথবা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের যে কোনো একটিতে সম্মানজনক পদে চাকরি পাইয়ে দিবেন আব্দুল কাদের। কিন্তু চাকরি পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আব্দুল কাদেরের কাছে ইরফান ফারাজী টাকা ফেরত চাইলে তিনি তালবাহনা করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে ইরফান ফারাজীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আব্দুল কাদের। এ জন্য তিনি চাঁচড়া রায়পাড়ার মৃত লিয়াকত হোসেনের ছেলে সন্ত্রাসী পাখিকে ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে খুনি হিসেবে ভাড়া করেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসী পাখিকে অগ্রিম হিসেবে ১০ হাজার টাকা দেন আব্দুল কাদের। গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলে সন্ত্রাসী পাখি সহযোগীদের নিয়ে ইরফান ফারাজীকে খুন করে ফিরে আসার পর আব্দুল কাদের তাকে আরো ১৫ হাজার টাকা দেন। চুক্তির বাকী ২৫ হাজার টাকা পরে পরিশোধের কথা আব্দুল কাদেরের। কিন্তু এরই মধ্যে হত্যা মিশনে অংশ নেয়া তাওহিদ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে যায়। এ কারণে আব্দুল কাদের পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যান।
এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, আব্দুল কাদেরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইরফান ফারাজীর চাকরির টাকা লেনদেনের মধ্যস্থকারী শাহিনা আক্তারকে সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় শাহিনা আক্তার চাকরির জন্য টাকা লেনদেনের সত্যতা স্বীকার করেন এবং আব্দুল কাদেরের কাছ থেকে নেয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেন। উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর খড়কি ধোপাপাড়ায় নিজ দোকানের ভেতর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইরফান ফারাজী। তিনি ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে।