কর্মব্যস্ততা বেড়েছে চৌগাছার মৃৎশিল্পীদের

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ শীতের আগমনে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে চৌগাছার পালপাড়াতে। খেঁজুর গাছের ভাড়, গুড় ভরা ভাড়, রিংসহ নানা ধরনের মৃৎশিল্প তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পরিবারের সদস্যরা। রাতদিন অবিরাম কাজ করেন তারা। কিন্তু পরিশ্রমের নায্য মূল্য পাননা বলে অভিযোগ অনেকের। বাজারে সব কিছুরই দাম বেড়েছে অথচ দাম বাড়েনি মাটির তৈরি পণ্যের। আধুনিকতার জগতে পেশা টিকিয়ে রাখতে তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
বছরের বার মাসই কাদামাটির সাথে সম্পর্ক মৃৎশিল্পীদের। কাক ডাকা ভোর হতে রাত পর্যন্ত মাটি দিয়ে তৈরি করে চলেছেন হরেক রকমের জিনিসপত্র। এগুলো রোদে শুকিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে তারপর চলে বেচাকেনা। বছরের পর বছর ধরে এ পেশাকে আগলে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা। উপজেলার ইছাপুর, হাজরাখানা, তাহেরপুর, সাঞ্চাডাঙ্গা, নিয়ামতপুর, গরীবপুর গ্রামে বসবাসরত মৃৎশিল্পীরা সারা বছরই মাটি দিয়ে হরেক রকমের মালামাল তৈরি করেন। তবে শীত এলে তাদের বাড়ে ব্যস্ততা। অন্য বছরের মত এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু বাজারে সঠিক মূল্য না পেয়ে চরম হতাশ তারা।
চৌগাছা পৌর এলাকার ইছাপুর পালপাড়াতে গিয়ে দেখা গেছে, কাদামাটি নিয়ে ব্যস্ত বাড়ির গৃহকর্তা থেকে শুরু করে গৃহিণী এমনকি স্কুল পড়–য়া ছেলে মেয়েরা। এখন ভরা মৌসুম তাই কারো দম ফেলার মত সময়টুকু নেই। কর্মব্যস্তার মধ্যে কথা হয় পালপাড়ার মৃত গোবিন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে গৌর চন্দ্র পালের সাথে। তিনি বলেন, ৪০ বছর ধরে কাদামাটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু ভ্যাগ্যের উন্নতি ঘটাতে পারিনি। পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছি। বছরের বার মাসই কাজ করি, তবে শীত এলে কাজের ব্যস্ততা কিছুটা বেড়ে যায়। যে পরিমাণ কষ্ট করি তার মূল্য পাইনে। বাজারে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের তৈরি পণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। তাই পেশা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। পালপাড়ার গৃহীণি লাবনী পাল বলেন, সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে স্বামীর সঙ্গে সমানভাবে কাজ করে যাই। একদিন দু’দিন না বছরের সব সময়ই এভাবে কাজ করি। উনি (স্বামী) একটি হাঁড়ি বা ভাড় তৈরি করে দেন। সেটি রোদে শুকানো ও আগুনে পুড়ানো সব কিছুতেই সহযোগিতা করি। কিন্তু আমরা এর সঠিক দাম পাইনা। মহল্লার সুশান্ত পাল বলেন, হাঁড়ি, কড়াই, ঠিলে, নেন্দে, রিং এক কথায় মাটির তৈরি সব কিছুর পেছনে ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে এক ট্রলি মাটি ১ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। জ্বালনি হিসেবে কাঠের গুঁড়া আগে কিনেছি ২শ টাকায়। বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ৬শ টাকায়। নিজেদের শ্রম তো আছেই। কিন্তু বাজারে আমরা ন্যায্য মূল্য পাইনা। বর্তমানে ১টি ঠিলে(ভাড়) ২০ থেকে ২৫ টাকা, রিং ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দই খুরি ৪ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব জিনিসপত্র তৈরি করতে ব্যয় বেড়েছে কিন্তু পণ্যের দাম বাড়েনি। অন্য কোন কাজ পারিনা, তাই বাবা দাদাদের এই পেশাকে আগলে রেখে দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগর্তির বাজারে কোন রকমে বেঁচে আছি।
গৃহিণী শিবা পাল, শিল্পী পাল, রুপালী পাল বলেন, মাটি দিয়ে হাঁড়ি পাতিল তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে চলে সংসার। অনেক কষ্টে দিন যায় আবার দিন আসে। আমরা কষ্ট করি কিন্তু ছেলে মেয়েদেরকে এই পেশা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছি। বর্তমানে পালপাড়ার সন্তানরা বিদ্যালয়ে যায়, পড়ালেখা করে। অর্থ অভাবে আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনা, সরকারি সহযোগিতা পেলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি অনেক সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।