চৌগাছায় বেগুনের বাম্পার ফলনেও দুশ্চিন্তায় কৃষক

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছার কৃষকরা শীতের সবজি বেগুন চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। শীত মৌসুম শুরুর আগে বেগুনের বাজার দর সন্তোষজনক হলেও বর্তমানে বাজার দর তলানিতে। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠা নিয়ে শংকায় চাষিরা। বাজার তদারকি করে সবজির নায্যমূল্য নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন উপজেলা প্রান্তিক চাষিরা।
কৃষি প্রধান উপজেলা হিসেবে খ্যাত চৌগাছা। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষক বছরের বার মাসই কোন না কোন ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন। ফসল উৎপাদনে কৃষক এক বুক আশা নিয়ে জমিতে কাজ শুরু করেন। সেই ফসল যখন উঠতে শুরু করে তখন যদি কাংখিত দাম না পান তার চেয়ে কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না, একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা বেগুন চাষ করে লাভ তো দূরের কথা তাদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। দু’সপ্তাহ আগেও যে বেগুন কৃষক ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছে এখন সেই বেগুন ১৫ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। বিশেষ করে মণিরামপুরে, চ্যাগা ও ভাঙর জাতের বেগুন চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলার স্বরুপদাহ, টেংগুরপুর, আন্দারকোটা, তারনিবাস গ্রাম এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক শীতের সবজি ক্ষেতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এস ময় কথা হয় তারনিবাস গ্রামের কৃষক চঞ্চল কবিরের সাথে। তিনি বলেন, কৃষক শুধু স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেয় এমন নজির খুবই কম। অনেক আশা নিয়ে মাত্র ৬ কাটা জমিতে উন্নত জাতের বেগুনের চাষ করেছিলাম। আগস্টের মাঝামাঝিতে জমিতে চারা রোপন করি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। প্রথম দিকে বেগুনের বাজার দর সন্তোষজনক ছিলো। সেই সময়ে মনে করেছিলাম হয়ত অনেক কিছুই হবে। কিন্তু এখন বাজারে বেগুনের যে দাম তাতে খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ। আজ (মঙ্গলবার) ১০০ কেজি বেগুন তুলেছি। এরমধ্যে ৬০ কেজি হয়েছে পোকা আর ৪০ কেজি ভালো বেগুন বিক্রি করেছি মাত্র ১৭ টাকা কেজি দরে। নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকার আক্রমণ হতে ফসল রক্ষা করতে পারছিনা। অন্যদিকে বাজার দর তলানিতে। কিভাবে কৃষক লাভবান হবে। একই কথা বলেন কৃষক মিজানুর রহমান, উজ্জল হোসেন, আব্দুর রশিদ, তবিবর রহমান, আব্দুল জলিল। চাষিরা বলেন, কৃষি উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে, অধিক দামে সার, কীটনাশক কিনে ফসল উৎপাদন করে সেই ফসল যদি পানির দরে বিক্রি করতে হয় তাহলে কৃষক কিভাবে বাঁচবে। কৃষক মাথার ঘাম পেয়ে ফেলে উৎপাদন করছে ফসল, তার নায্য দাম থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি অথচ আমার বানানো ফসল হতে এক শ্রেণির মানুষ প্রতি নিয়ত লাভবান হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কমৃকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে শীতের আবহাওয়া সর্বত্রই বিরাজ করছে। ধীরে ধীরে পোকার উপদ্রব কমে আসবে। তারপরও কৃষি অফিস ফসল রক্ষায় কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে।