হুমকির মুখে তিনশ’ কোটি টাকার উপকূল উন্নয়ন বেড়িবাঁধ প্রকল্প

0

 

নজরুল ইসলাম আকন,শরণখোলা (বাগেরহাট )॥ বাগেরহাটের শরণখোলায় ৩৫/১ পোল্ডারের সদ্যনির্মিত উপকূল উন্নয়ন বেড়িবাঁধের প্রায় ১০ টি পয়েন্ট হুমকির মুখে রয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ধ্বস ও ফাঁটল। বলেশ্বরনদ তীরবর্তী গাবতলা অংশের প্রায় এক কি.মি. নদীর পাড় ভেঙ্গে চলে এসেছে মূল বেড়ীবাঁধের কাছাকাছি। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে যে কোন সময় বিলীন হতে পারে সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত জনপদের মানুষের .জন্যে নির্মিত উপকূলীয় এ বেড়িবাঁধ । বাঁধের ফাটল ও ব্লক ধ্বসের জন্যে নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজ ও তদারকিতে কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী। তারা দ্রুত নদী শাসনের ব্যাবস্থা ও বাঁধের ফাঁটল ধ্বস মেরামতের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। সরেজমিন জানা যায় , ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে উপকূলীয় শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের প্রায় ২০ কি.মি. বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ২২০ কি.মি. বেগের ঘূর্ণিঝড় আর ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় বিশ গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি,গাছপালা ,রাস্তাঘাট। বলেশ্বর নদ তীরবর্তী বগী, দক্ষিণ সাউথখালী,উত্তর সাউথখালীসহ ৫ টি গ্রামের প্রায় ১২শ মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়।এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলো শিশু ও নারী। গবাদি পশু মারা যায় দশ সহস্রাধিক । মাছের ঘেরসহ আমনের ক্ষেত যায় ভেসে। বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সেদিন সরকারি,বেসরকারি সংস্থাসহ বিদেশিরাও বিভিন্ন সাহায্য নিয়ে ছুটে আসেন। সর্বহারা মানুষ ধ্বংস স্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে সেদিন দাবি জানায় ত্রাণ চাইনা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই । বর্তমান বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাগেরহাটের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কি.মি. জায়গা জুড়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) অধীনে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান সিএইচডব্লিউ নামের চীনের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে সালের জানুয়ারি মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্ধিত সময়ানুযায়ী কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। ৬২ কি.মি. বাঁধের শরণখোলার সুন্দরবন সংলগ্ন বগী গ্রাম থেকে মোরেলগঞ্জের বরিশাল গ্রাম পর্যন্ত মোট ২৬ কিলোমিটার নদী তীর এলাকা কমবেশি ভাঙ্গন কবলিত। তবে বাঁধের অধিক ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা হচ্ছে বগী,গাবতলা,তাফালবাড়ি, রাজৈরবটতলা,কুমারখালী। এসব জায়গার কাছাকাছি নদীতে সৃষ্টি হয়েছে গভীর খাঁদ। উপজেলার বগী গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার খলিফা, পান্না হাওলাদার, সামসুর রহমান,রাজ্জাক হোসেন দীপু জানান, এ বাঁধ তারা চাননি, নদী শাসন না করা হলে ৩০০ কোটি টাকার বাঁধ তাদের কোন কাজে আসবেনা। প্রতিনিয়ত নদীর পাড় ভাঙ্গছে। আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যেই মূল বাঁধে ধ্বস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তারা আগের মতো বন্যা কবলিত হবেন। উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন জানান, বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষের বাঁধের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অদক্ষতা, কাজের সঠিক তদারকি না করা এবং নদী শাসনের ব্যাবস্থা না রেখে বাঁধ নির্মাণ করায় নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন তারা। মাটির বদলে বালি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের ঢালে অসংখ্য জায়গা সিসি ব্লকে দেখা দিয়েছে ধ্বস। গাইডওয়াল ও কপাটে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। উপজেলা নদী শাসন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিলন জানান, সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় তিনশ কোটি টাকা ব্যয় করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও তাতে সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত এ জনপদের মানুষের আতংক কাটছেনা। বেড়িবাঁধ হস্তান্তরের আগে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার সাথে যৌথভাবে টেকনিক্যাল টিম দিয়ে তদন্তের আহবান জানান।