এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উস্কানি অভিযুক্ত ৫ শিক্ষকের বক্তব্য গ্রহণ তদন্ত কমিটির

0

মাসুদ রানা বাবু॥ দেশব্যাপী তোলপাড় হওয়া ঢাকা বোর্ডের এইচএসসি’র বাংলা প্রথম প্রত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের বক্তব্য নিয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষককে বৃস্পতিবার যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে তলব করা হয়। সকালে তারা একে একে শিক্ষা বোর্ডে আসেন। তবে সাংবাদিক এড়াতে নিজেদের মিথ্যা পরিচয় দেন। তদন্ত কমিটির প্রধান যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী বলেন, আমরা তাদের বক্তব্য শুনলাম। প্রয়োজন হলে তাদের আবারও ডাকা হবে। আগামী মঙ্গলবার তদন্তের শেষ দিন। পরে বুধবার আমরা তদন্ত প্রতিবেদন লিখিত আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। তিনি জানান, তার কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অভিযুক্ত পাঁচ কলেজ শিক্ষকের বক্তব্য নেয়া হয়। তবে অভিযুক্তদের বক্তব্যে বিষয়ে কিছু বলেননি তদন্ত কমিটির প্রধান। সকালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে উপস্থিত থেকে দেখা যায় অভিযুক্ত পাঁচ জন অত্যন্ত সঙ্গোপনে শিক্ষা বোর্ডে আসেন এবং চলে যান। গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সকালে তারা নিজেদের আড়াল করে তদন্ত কর্মকতার কক্ষে প্রবেশ করেন। বের হওয়ার সময়ও একই পন্থা অবলম্বন করেন। এমনকি নিজেদের নাম পরিচয় পর্যন্ত গোপন করার চেষ্টা করেন তারা। দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে প্রথমে তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন প্রশ্নপত্র তৈরিকর্তা ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। এই প্রতিবেদক তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি। এ বিষয় আর কিছু বলার নেই। এ কথা বলেই তিনি শিক্ষা বোর্ড ত্যাগ করেন। এরপর একে একে প্রশ্নপত্র পরিশোধনকারী দলের চার সদস্য বেরিয়ে আসেন।

বেলা ২ টা ১৬ মিনিটে অভিযুক্ত সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান রেবিয়ে আসেন। এই প্রতিবেদক তার নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিরি প্রথমে কোন কথা বলতে চাননি। কিছু সময় পর তিনি বলেন, আমার নাম পরাগ আমি অন্য কাজে এসেছি। কাজটি কি সেটি তিনি বলতে চান নি। পরে বেলা ২ টা ২০ মিনিটে বেরিয়ে আসেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনিও শফিকুর রহমানের পথ অনুসরণ করেন। নিজেকে আব্দুস সবুর বলে পরিচয় দেন। তিনিও একই কথা বলেন। আমি অন্য কাজে এসেছি। আমার নাম জেনে কী হবে। শফিকুর রহমান ও রেজাউল করিমের পথ অনুসরণ করে তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষ ত্যাগ করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সরকারি অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন ও মীর্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ। তদন্ত কমিটির প্রধান কেএম রব্বানী জানান, তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য শিক্ষা বোর্ডের উপ কলেজ পরিদর্র্শক মদন মোহন দাশ ও বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে ১১ নম্বর দাগের প্রশ্ন নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্নে বলা হয় নেপাল ও গোপাল নামের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছোট ভাই নেপাল তার বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামের একজনের কাছে একাংশ জমি বিক্রি করে দেন। আব্দুল সেই জমিতে বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং কোরবানির ঈদে সেখানে গরু কোরবানি দেন। এতে জমি বিক্রেতার ভাইয়ের মন ভেঙে যায়, তিনি জমি-জমা সব ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান।