ভাই হত্যার বিচার না পেয়ে সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমালেন রতন ও কার্তিক পাল

0

মজনুর রহমান,মণিরামপুর(যশোর)॥ যশোরের মণিরামপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে পরিমল হত্যার পাঁচ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এখনো এ হত্যাকান্ডের বিচার পায়নি ভুক্তোভোগী পরিবার। তাই মামলার বাদি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক  রতন পাল ও তার ভাই কার্ত্তিক পাল সপরিবারে ভারত পাড়ি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, ছোটভাই পরিমল হত্যার সঠিক বিচার না পাওয়া, আসামিদের অব্যাহত হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তার আশঙ্কায় রতন পাল ও তার ভাই কার্ত্তিক পাল গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, জমিজমাসহ প্রায় দেড় শত কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে সোমবার রাতে গোপনে সপরিবারে ভারত পাড়ি দিয়েছেন। আর এ খবর প্রচার হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, পৌরশহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মেসার্স রতন পাল এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী রতন পাল ও তার দুই ভাই কার্ত্তিক পাল ও পরিমল পাল ২০১৭ সালের ১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে নিজেদের মাইক্রোবাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। রাত ১০ টার দিকে দোলখোলা মোড়ে অবস্থিত নিজ বাসার সামনে পৌঁছানো মাত্রই দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা পরিমলের কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তদের সাথে পরিমলের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা পরিমলের বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে দুইটার দিকে পরিমলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২ জুলাই নিহতের বড় ভাই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রতন পাল বাদি হয়ে অজ্ঞাত ছয় বক্তিকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিমল হত্যার পর গোটা মণিরামপুরের ব্যবসায়ীসহ সর্ব মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। খুনিদের শাস্তির দাবিতে প্রায় মাসব্যাপী ব্যবসায়ী, সামাজিক, পেশাজীবী, রাজনৈতিক দলগুলো মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
পরিমল হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের অচিন্ত্য কুমার, আল আমিন, জালালসহ অন্তত পাঁচজনকে আটক করে। আটকরা সবাই এখন জামিনে মুক্ত। অপরদিকে মামলার সাবেক তদন্তকারী অফিসার এসআই তপন কুমার সিংহ মোট ১২ জনকে দোষি সাব্যস্ত করে আদালেতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। মামলাটি এখনও বিচারাধীন । কিন্তু মামলার বাদি ও পরিবারবর্গ অভিযোগ করে আসছিলেন, আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে এবং চিঠি লিখে হুমকি দিয়ে আসছিল মামলা প্রত্যাহারের জন্য। একারণে রতনপাল ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করতেন। রতন পালের ছেলে ও কার্ত্তিক পালের ছেলে প্রায় ১৫ বছর আগে ভারতে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণের পর জমি কিনে সেখানে গাড়ি বাড়ি করেন। তারা এখন সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এদিকে ছোটভাই পরিমল হত্যা পর থেকে রতন পাল ও কার্ত্তিক পাল ভারতে পাড়ি জমাতে গাড়ি বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সহায় সম্পত্তি আস্তে আস্তে গোপনে বিক্রি করতে শুরু করেন। সর্বশেষ জানা যায়, গত সোমবার রতন পাল পৌরশহরের দোলখোলায় অবস্থিত জমিসহ দোতলা বাড়িটি স্পেনের এক প্রবাসীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। সোমবার রাতেই রতনপাল ও কার্ত্তিক পাল সপরিবারে অতি গোপনে ভারতে পাড়ি জমান। অবশ্য পৌর শহরে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স রতন পাল এন্ড ব্রাদার্স এখন দেখভাল করছেন রতন পালের ভাগ্নে আশিষ পাল ও ভগ্নিপতি স্বপন পাল। ভারতে পাড়ি দেওয়া নিয়ে কথা হয় ভগ্নিপতি স্বপন পালের সাথে। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, বিনাকারণে তাদের ছোটভাই পরিমলকে হত্যা করা হলো। অথচ এ হত্যার কোন বিচার পাওয়া গেলনা। উপরন্তু আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত মামলা প্রত্যাহারের জন্যে হুমকি দিয়ে আসছিল। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী জানান, রতনপাল সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন এ খবর এখন মানুষের মুখে মুখে। ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি তুলসি কুমার বসু জানান, তিনি শুনেছেন সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে রতনপাল সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। সমিতির সভাপতি হাজী বাবর আলী জোয়র্দ্দার বলেন, পরিমল হত্যার পর পরই রতন পাল সিদ্ধান্ত নেন ভারতে চলে যাবার। মনিরামপুর থানার সদ্য যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ শেখ মনিরুজ্জামান জানান, রতন পালের সাথে এখনও তার পরিচয় হয়নি। তবে হুমকির বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেন জানান, রতন পালের ভারত পাড়ি জমানোর বিষয়টি তার জানা নেই।