নানা সমস্যায় জর্জরিত শৈলকুপার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো

0

মফিজুল ইসলাম,শৈলকুপা(ঝিনাইদহ)॥ সরকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের দৌড়াগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশের মতো ঝিনাইদহের শৈলকুপায় চালু করেছিল কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু নানা সংকটে চলছে এসব কমিউিনিটি ক্লিনিকগুলোতে।
১টি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলায় ৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এরমধ্যে ৪০টির কার্যক্রম চালু রয়েছে ও ৩টির নতুন ভবন হস্তান্তর হয়েছে, যেগুলোতে অল্পদিনের মধ্যেই কার্যক্রম চালু হবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে ৬ হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা। কিন্তু এখন মূলত মা ও শিশুদের নিবন্ধন, ব্লাড প্রেসার দেখা ও টিকা কার্যক্রম চলে এই ক্লিনিকগুলোতে। ডায়াবেটিস ছাড়া অন্য কোনো রোগের প্রাথমিক কোনো পরীক্ষা করা হয় না। ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সেবার মান বাড়ানোর দাবি ভুক্তভোগীদের। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সিএইচসিপির ডিউটি থাকে সপ্তাহে ছয় কর্মদিবস, হেলথ অ্যাসিসট্যান্টের তিন কর্মদিবস, এফডব্লিউএর দুই কর্মদিবস। তবে এমবিবিএস ডাক্তারদের কোনো ডিউটি থাকে না। একজন সিএইচসিপি, একজন এফডব্লিউএ ও একজন এইচএ অর্থাৎ দুই থেকে তিনজন স্টাফ দিয়ে সেবা প্রদান করা হয়। চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ একেবারেই কম। প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে এসব ওষুধ ফুরিয়ে যায় তাই অনেক সময় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এক ধরনের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরমধ্যে দিগনগর, বাগুটিয়া, ঠাকুর মালিখিয়া, ত্রিবেনী, টংবিলা, পুরাতন মালিথিয়া, নাকোইল, শীতালী বাজারসহ অনেক কমিউনিটি ক্লিনিক সময়সূচি মানছে না। যার কারণে সেবা নিতে আসা মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সকাল ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস সময়সূচি থাকলেও অনেকেই তা মানছে না। আবার সংস্কারের অভাবে ক্লিনিকভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ক্লিনিকে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। আবার যারা আছেন, তারাও সময়মতো অফিসে হাজির হন না। এ ছাড়াও বেশিরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধের সংকট লেগেই আছে। কোথাও কোথাও দেখা যায়, বিদ্যুৎ ও নিয়মিত পানির সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। কোথাও আবার শৌচাগার নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নিয়ে ফিরছিলেন বসন্তপুর এলাকার আক্কাস হোসেন। তিনি বলেন, অনেক ক্লিনিকে সিএইচসিপি থাকলেও তারা ঠিক সময়ে আসেন না। এলেও ১২টার দিকে চলে যান। একই অবস্থা অন্য কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকেরও। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন একজন এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা সেবা প্রদান করলে সেবার মান ভালো হতো এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ উপকৃত হতো বলে মনে করেন আক্কাস। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিতে আসা বাহির রয়েড়া গ্রামের আসমা খাতুন বলেন, নানা সংকটের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক কিছু সেবা আমরা পেয়ে থাকি। মাঝে মাঝে ওষুধ ফুরিয়ে যায়। সংকটসমূহ চিহ্নিত করে আরও ভালো সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। উপজেলার আড়–য়াকান্দি এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নাদিরা খাতুন বলেন, অবকাঠামো সংস্কারের অভাবে নানা সমস্যার মধ্যে আছি। সেইসঙ্গে ওষুধ সংকটও রয়েছে। এরমধ্যে যতটা সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও এ কমিউনিটি ক্লিনিকে ঢুকতে বিশাল গর্ত থাকায় চলাচলে সমস্যা দেখা যায়। এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে জনবল সংকটসহ অবকাঠামোগত বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যা নেই এ কথা বলা যাবে না। তবে এসব সমস্যা থাকার পরও আমরা মানুষের দোরগোড়ায় সাধ্যমতো সেবা পৌঁছে দিচ্ছি।