মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করুন

0

 

গত শনিবার দেশের প্রায় সব পত্রিকায় একটি কমন খবর ছিল “বাড়ছে বাজার দর”। যার নানাবিধ শিরোনাম হয়েছে “কেউ লিখেছেন, “বাজারে স্বস্তি নেই”। কেউ লিখেছেন চাল, ডাল, তেল ও ডিমের পর চিনির দামও নতুন রেকর্ড হলো। সংবাদে সবাই বলেছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আটা ও ময়দার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। সয়াবিন তেলসহ যে সব পণ্যের দাম কমার কথা ছিল তা কমেনি। মাছের বাজারেও ক্রেতাদের বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। শীতের আগাম সবজি বাজারে এলেও দাম বাড়তি। কিন্তু চিনির দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ, এক সপ্তাহ আগেও চিনির দাম ছিল ৯০/৯৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিনি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো কোন কিছু না জানিয়ে বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই এখন চিনির দাম বাড়ছে। অন্যদিকে চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীদের ভাষ্য, এলসি খোলার জটিলতায় আমদানি কমে গেছে, ডলারের উচ্চমূল্যে বেড়েছে আমদানি খরচ। আবার গ্যাস সংকটে কমেছে উৎপাদন। সব মিলিয়েই বাজারে টান পড়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার-প্রশাসনের উদাসীনতায় আমদানিকারক ও মহাজন ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলে যখন তখন মূল্য বাড়ছে। অপরদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ থেকে দ্রুতই মুক্তির কোনো পথও খোলা নেই। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। শুধু বৈশ্বিক পণ্যই নয়, দেশে যেসব পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর দামও ঊর্ধ্বমুখী, যা মানুষের ওপর বোঝা সৃষ্টি করছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। এদিকে আইএমএফ বলছে, গত দুই বছর মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৬ শতাংশ। চলতি বছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াতে পারে ৬.১ শতাংশ। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
এটা প্রশাসনিক সত্য যে, বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কোনো কোনো সময় তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ায়। এক্ষেত্রে তারা কয়েকজন মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেট করেন। এ কারণেই আমদানি বা দেশীয় পণ্য উভয় ক্ষেত্রে দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম দফায় দফায় বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট নিত্যদিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকে মূল ভূমিকা নিতে হবে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে চাল, আটা, তেল, লবণ, চিনি ও ডালের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। একই সাথে নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করতে হবে।