উপকূলের ১৯ জেলায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

0

 

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বঙ্গোপাসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা উপকূলের ১৯ জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্গোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুল হক। রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ নিয়ে জরুরি ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি লঘুচাপ আকারে ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি ধীরে ধীরে ২২ অক্টোবর দুপুর ১২টায় সুস্পস্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। একই দিনে নিম্নচাপে এবং রবিবার (২৩ অক্টোবর) গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এদিকে গভীর নিম্নচাপটি রবিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঘড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তখন এর নাম হবে ‘সিত্রাং’।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি ৮৭ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ এবং ১৭ ডিগ্রি অক্ষাংশ সংযোগস্থলে পৌঁছার পরে এটি উত্তর-পূর্ব দিকে টার্ন নিতে পারে। যদি উত্তর-পূর্ব দিকে টার্ন করে তাহলে এটি কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৭৩০ কিলোমিটারজুড়ে উপকূলের ১৯টি জেলাতেই আঘাত হানবে। ঘূর্ণিঝড়টি ২৪ অক্টোবর (সোমবার) দিবাগত রাত থেকে ২৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এটি যেহেতু সুপার সাইক্লোন হবে না, সিভিয়ার সাইক্লোন হবে, এটার গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন লঘুচাপ সুষ্টি হয়েছে, আমরা তখন থেকেই কাজ শুরু করেছি।’
এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উপকূলীয় কিছু এলাকায় বইছে ঝড়ো হাওয়া। গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’য় রূপ নিতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর আরও বেশি উত্তাল হয়ে পড়ায় আগের মতোই দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরে সব ধরনের ট্রলার ও নৌকা চলাচল নিষেধ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা পরবর্তী সময়ে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩টি দেশের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘সিত্রাং’। ‘সিত্রাং’ নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া।