খেজুর গাছ তোলায় ব্যস্ত রাজগঞ্জের গাছিরা

0

 

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর)॥ যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই “যশোরের যশ,খেজুরের রস” আহরণে ইতিমধ্যে গ্রামের পর গ্রাম খেজুরগাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন গাছিরা। ফলে অনেকটা অবহেলিত খেজুরগাছগুলোর এখন বেশ কদর বাড়তে শুরু করেছে। গাছিরা কোমরে দড়ি বেঁধে হাতে ধারালো দা নিয়ে নিপুণ হাতে খেজুরগাছগুলো চাঁছা ছোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।  এরপর গাছ গুলোতে নলি বসানোসহ পরিচর্যা  করবেন। কয়েকদিন পরেই এসকল গাছ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করবেন। রস সংগ্রহের পর গুড়-পাটালি তৈরিতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বৃহত্তর এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নের ২৪৯টি গ্রামের গাছিরা।
স্থানীয়রা বলছেন, ইতিমধ্যে রাজগঞ্জ অঞ্চলে খেজুরগাছ গুলো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে  । আর কিছুদিন পরেই এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। সংগ্রহকৃত খেজুরের রস থেকে তৈরি হবে গুড়-পাটালি।
কথা হয় উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের রাজগঞ্জ মনোহরপুর গ্রামের গাছি ওমর আলী গাজীর সাথে। তিনি জানান, তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন। তার প্রয়াত পিতা ইজ্জেত আলী ও এ পেশায় জড়িত ছিলেন। তার কাছ থেকে শিখেছেন এ কাজটি।
চলতি শীত মৌসুমে তিনি শতাধিক খেজুরগাছ ভাগে নিয়েছেন। এ সকল গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা  কেটে ফেলার পর খেজুর গাছের বুক চিরে সাদা ছাল বের করার কাজও ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুরোদমে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করা যাবে বলে জানান এ গাছি। অপর গাছি চালুয়াহাটি ইউনিয়নের ইচানি গ্রামের টুটুল হোসেন জানান, চলতি বছরে তিনি ৫০টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুুত করেছেন। খেজুর গাছ সংকটের কারণে আগের মতো সেই রমরমা ব্যবসা এখন আর নেই। বৃহত্তর মণিরামপুর উপজেলার ২৪৯টি গ্রামে কম-বেশি খেজুরগাছ রয়েছে।
ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম রসুল চন্টা জানান, ২০বছর আগেও উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নের সর্বত্রই চোখে পড়ত ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ। আর খেজুরের রস ও তা দিয়ে তৈরি গুড় পাটালি ছিল এ অঞ্চলের বিখ্যাত একটি সুস্বাদু খাবার। কিন্তু বদলেছে সে অবস্থার। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেজুর গাছের মূল্য কম এবং তা সহজলভ্য হওয়ায় ইটভাটা ও টালি ভাটার মালিকদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সাবেক এ জনপ্রতিনিধি।
এব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত কয়েক বছর পূর্বে এ উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা ছিল ২লাখ ৫০হাজার। যা ২০২২সালে এসে দাঁড়িয়েছিল ১লাখ ৯০হাজারে। দিন দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাকালীন বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রায় ৯৫হাজার খেজুরের চারা রোপণ করেছে। এছাড়া চলতি বছরে আরো ৫৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। সর্বমোট তিন বছরে বৃহত্তর এ উপজেলায় দেড় লাখ খেজুরের চারা রোপণ করা হয়েছে।