পথে পথে সশস্ত্র হামলা ও হয়রানি সমাবেশে যাওয়া-আসার সময়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥  শনিবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগদান ও ফেরার পথে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলা চালানো অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি খুলনার প্রবেশ পথের প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসিয়ে সমাবেশে যোগদানে বাধা দেয়াসহ হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) জানান, গতকাল শনিবার খুলনার সমাবেশ থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপির অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। অভিযোগে রয়েছে এ সময় সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নিকে বহনকৃতসহ দুইটি গাড়ি ভাঙচুর করে। আহতরা রাতেই মনিরামপুরে ফিরে হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন।
ইফতেখার সেলিম অগ্নি জানান, খুলনার সমাবেশ শেষে ১০ নেতাকর্মীসহ তিনি একটি জিপগাড়ি যোগে মনিরামপুরস্থ নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় খুলনার রেলিগেটে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে গাড়ির ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এতে তিনিসহ আহত হন মনিরামপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শোভন হোসেন, ছাত্রদল নেতা দেলোয়ার হোসেন হিমু, মামুন বাবু, ইমাম হোসেন ও নাজমুল হোসেন।
অপরদিকে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন জানান, খুলনার সমাবেশ শেষে মনিরামপুরের বিএনপির ১০ নেতাকর্মী একটি সিএনজিযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় ফুলতলা বাজারের পাশে পৌঁছালে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সিএনজিটি আটকিয়ে নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারপিটের পর টাকা এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। সন্ত্রাসী হামলায় এসময় আহত হন মনিরামপুরের যুবদল কর্মী বিজয়রামপুরের সিরাজুল ইসলাম, মোন্তাজ আলী, সুন্দলপুর গ্রামের আরিফ হোসেন, বাকোশপোল গ্রামের আবদুর রহিম, নাহিদ হোসেন। এর মধ্যে সিরাজুল ইসলামের মাথা ফেটে যায় এবং মোন্তাজ আলী ও আবদুর রহিমের হাত ভেঙে যায়।
এছাড়া হরিহরনগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রবিউল ইসলাম কয়েকজন কর্মীকে সাথে নিয়ে সমাবেশ শেষে নিজ মাইক্রোবাসে ফিরছিলেন। এ সময় খুলনার শিববাড়ি মোড় পার হলে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তার মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করে। এতে আহত হন রবিউল ইসলামসহ পাঁচজন। সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগদিতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা মহানগরীর ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বরে আসার পথে দু’টি স্পটে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুরের দিকে নগরীর খালিশপুরস্থ ক্রিসেন্ট জুটমিল ঘাট সংলগ্ন ভৈরব নদে এবং নগরীর বৈকালি এলাকায় আলাদা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। একই সঙ্গে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ে। এখানে আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এছাড়া শিববাড়ী মোড়ে দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতদের ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, খুলনা শহরে বিভিন্ন প্রবেশমুখে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রবেশপথগুলোতে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করেছেন তারা। যারাই খুলনায় প্রবেশ করছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাব্বির হোসেন রানা অভিযোগ করেন, গণসমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য তারা ট্রলারযোগে ফুলতলা থেকে খুলনার পথে রওনা হন। পথিমধ্যে খালিশপুরস্থ ক্রিসেন্ট জুটমিল ঘাট সংলগ্ন ভৈরব নদে পৌঁছালে আগে থেকে অবস্থানরত সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে ট্রলার থামিয়ে মারধর করে। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচীব শেখ আবুল বাশার, জাহাঙ্গীর হোসেন, আতাহার শেখ, মো. জিকুসহ শতাধিক নেতা-কর্মী মারাত্মক আহত হন। এর মধ্যে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশারসহ বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে।

শামসুল আলম খোকন, ফুলতলা (খুলনা) থেকে জানান, সমাবেশে নদী পথে ট্রলারযোগে যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষের হামলায় ফুলতলা উপজেলা বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতদেরকে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ এ হামলা চালিয়েছে বলে উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের অভিযোগ।
দলীয় সূত্র জানায়, সড়ক পথে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় শনিবার সকাল ৯টায় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধা অতিক্রম করে ভৈরব নদের ফুলতলা ও শিকিরহাট ঘাট দিয়ে ৯টি ট্রলারযোগে খুলনার মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
উপজেলা যুবদলের আহবায়ক এনামুল ভুইয়া পারভেজ বলেন, দুপুর আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে ট্রলার বহরটি খুলনার ৫নং ঘাট এলাকায় পৌঁছালে ৫/৬টি ট্রলার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডাররা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে, রাম দা, ইটের খোয়া ও রেলের পাথর দিয়ে সমাবেশগামী ট্রলারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাঁদের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার (৫৪) যুগ্ম আহবায়ক শেখ লুৎফর রহমান (৬০), বিএনপি নেতা মোল্যা মনিরুল ইসলাম (৫৪), আব্দুল্লাহ (৩০), সাজ্জাদুজ্জামান (৫০), জিয়াউর রহমা( ৪৫), মোঃ তাছির (৫৬), জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫), ইয়াছিন আলী (৩৬), শেখ হাবিুবর রহমান (৪৫), সোহরাব হোসেন (৫৬), ইকরামুল বিশ^াস (৩৫), হারিুন মোল্য (৪৮), ফেরদাউস মোলা (৪৪) শেখ সিরাজুল ইসলাম (৫০) আঃ মজিদ (৬০) সুনিল দাস (৪৮), সুমন সরদার (৩৮), আঃ গফ্ফার শেখ (৫৫) কে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে আব্দুল্লাহর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানাস্তর করা হয়। এছাড়া আহত অন্যান্য নেতাকর্মীরা খুলনার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়। ঘটনার সময়ে আত্মরক্ষার্থে শতাধিক নেতাকর্মী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আমির এজাজ খান বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুলনার মহাসমাবেশ ভু-ুল করার জন্য গত ৩দিন ধরে পাইতারা চালাচ্ছিল। তারাই ফুলতলা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ফুলতলা থানার ওসি মোঃ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ঘটনাটি খুলনা এলাকাতে ঘটেছে, ফলে আইনগত বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।