আগাম জাতের শিম কৃষকের মুখে হাসি এনেছে

0

 

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর)॥ শিম শীতকালিন একটি সবজি। কিন্তু গ্রীম্মে আগাম লাগানো এ শিম চাষ করে ৬১০জন চাষি লাভবান হয়েছেন। বৃহত্তর মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষ করা হয়েছে ইপসা জাতের আগাম শিম। আগাম জাতের এ শিম বর্তমান বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কৃষকেরা প্রতিকেজি শিম পাইকারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। উচ্চ ফলনশীল ইপসা জাতের শিম চাষ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর এ উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে ৬১০জন চাষি উচ্চ ফলনশীল ইপসা জাতের শিম চাষ করেছেন। এরমধ্যে রোহিতা ইউনিয়নে ২ হেক্টর, খেদাপাড়া ইউনিয়নে ২ হেক্টর, হরিহরনগর ইউনিয়নে ৮ হেক্টর, ঝাঁপা ইউনিয়নে ৬ হেক্টর, মশ্মিমনগর ইউনিয়নে ১৭ হেক্টর ও চালুয়াহাটি ইউনিয়নে ২১ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের উচ্চ ফলনসীল এ শিমের চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন ও বাজারদর ভালো পেয়ে বেশ খুশি চাষিরা।
সরজমিনে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ এখন শিমের আবাদে ভরে গেছে। এলাকার অধিকাংশ কৃষক শিমের ক্ষেতে কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষেত থেকে আগাম জাতের এ শিম তুলছেন। কথা হয় হানুয়ার গ্রামের চাষি সাইদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, একবিঘা জমিতে আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল ইপসা শিম লাগিয়েছেন। এই এক বিঘা জমিতে চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি দুই দফায় বাজারে শিম বিক্রি করেছেন ২৫ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায় বাজারে শিমের দাম অনেকটা বেশি থাকলেও বর্তমানে একটু কম পাচ্ছেন। পূর্বে প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছেন ১৪০ থেকে ১৫০টাকায়। যা বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে।
অপর চাষি মশ্মিমনগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের ফজর আলী গাজী জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল ইপসা জাতের শিম লাগিয়েছেন। এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। তিনি চার দফায় শিম তুলে বিক্রি করেছেন ৩৬ হাজার টাকা। এছাড়া আগাম লাগানো এ শিম গাছ থেকে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিম পাওয়া যায়। এ ৫-৬ মাসে তিনি তার ক্ষেত থেকে এক লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন।
চালুয়াহাটি ইউনিয়নের পানিছত্র গ্রামের আইউব হোসেন জানান, এখন থেকে কয়েক মাস বাজারে শিমের দাম ভালো পাওয়া যাবে। শীত আসলে শিমের দাম একেবারেই কমে যায়। তখন বাজারে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে প্রতি কেজি শিম বিক্রি করতে হয়। সব মিলিয়ে এবার শিমের বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পেয়ে এ উপজেলার কৃষকের মুখে হাসি ফুঁটেছে।
শিম ক্ষেতে কাজ পাওয়া মনোহরপুর গ্রামের ছালেহা বেগম, ছায়রা বেগম ও মোবরকপুর গ্রামের জমির উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগেও এলাকায় নিয়মিত কোন কাজ ছিল না। এখন তারা এলাকার শিম ক্ষেতে নিয়মিত কাজ করতে পারছেন। এতে তাদের সবারই সংসার খরচ স্বাচ্ছন্দেই চলে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে বৃহত্তর এ উপজেলায় কয়েক হাজার কৃষককে শিমসহ নানা সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। ফলে আগের তুলনায় এখন শিমসহ সকল প্রকারের সবজি উৎপাদন ও চাষির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উপজেলার উৎপাদিত শিম ও সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রফতানি করা হচ্ছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।