প্যাথলজি বিভাগের অচলাবস্থার অবসান হচ্ছে না যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে

0

বিএম আসাদ ॥ ভুল রিপোর্ট প্রদান অব্যাহত রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে। অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট না থাকায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে এ বিভাগের কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন গুরুত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মারুফ (৩৫) নামে এক রোগী চিকিৎসাধীন। তার বাড়ি মাগুরার শরশুনা গ্রামে। হাসপাতাল থেকে রোগ নির্ণয়ের জন্যে গত ১৩ অক্টোবর পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়। ওইদিন প্যাথলজি বিভাগে মারুফ এইসজিবি (ঐএই), ইএসআর (ঊঝজ), ডাব্লিউবিসি (ডইঈ)-সহ সাত প্রকার পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্যাথলজি রিপোর্টে ঐএই (হিমোগ্লোবিন) ১০১০হ-৬ মস/ধষ ঊঝজ-৩০(সস(১যৎ), ডইঈ-৭.২০০ষপসস- সব মিলে প্লাটিলেট (চষধঃবষবঃ) দেখানো হয়েছে। এ রিপোর্ট সঠিক হয়েছে কিনা তা জানার জন্য স্বজনরা ইবনেসিনা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করান। সেখানকার রিপোর্টে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের রিপোর্ট থেকে অনেক পার্থক্য। ইবনেসিনা হাসপাতালের প্যাথলজি রিপোর্টে প্লাটিলেট কার্ডটি দেখানো হয়েছে ৩.১১.০০০/পসস- হাসপাতালে ওই রিপোর্ট রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে ইবনে সিনা হাসপাতাল তার প্যাথলজি রিপোর্ট প্রদান করেন। সরকারি হাসপাতালের রিপোর্টের প্রতিটিতে ছিল এমন পার্থক্য। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন রিপোর্টটি সঠিক। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের রিপোর্ট না ইবনেসিনা হাসপাতালের রিপোর্ট? বিষয়টি জানতে ১৫ অক্টোবর যাওয়া হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে। সেখানে গিয়ে জানা গেল ইশিতা নামে একজন মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট মাইক্রোস্কোপ নিয়ে বসে আছেন। ৩দিন তিনি যোগদান করেছেন। কিছুই বুঝে উঠতে পারেন নি। এছাড়া আরো ৮ জন রয়েছেন, আউটসোর্সিং ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মচারী। জনগণের কাছ থেকে টিকিটের দাম অতিরিক্ত নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্যাথলজি বিভাগের কর্মচারী পুষছেন। কিন্তু তাদের কেউ প্যাথলজিতে অভিজ্ঞ নন। আবার সেখানে প্যাথলজি কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও নেই। যিনি প্যাথলজি কনসালটেন্ট হিসেবে দক্ষিণবঙ্গে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি হচ্ছেন ডা. মো. হাসান আব্দুল্লাহ। গত ২১ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে গেছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. গোলাম মোস্তফা আছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায়। যশোর মেডিকেল কলেজের অধীনে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগে রয়েছেন ১ জন সহযোগী অধ্যাপক ও ৩ জন প্রভাষক। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে রয়েছেন ১ জন সহযোগী অধ্যাপক ১ জন সহকারী অধ্যাপক ও ১ জন প্রভাষক। তাদের ক্লিনিক্যাল দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও কেউই হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন না। এমনকি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. জাহিদুর রহমান ও তাদের প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্ব দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে ডা. মো. হাসান আব্দুল্লাহ অবসরে যাওয়ার পর কার্যত: অচল হয়ে পড়েছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ। সেখানে প্যাথলজি রিপোর্টের সঠিকতা যাচাই করা এবং রিপোর্টে স্বাক্ষর করার জন্যে কোন চিকিৎসক নেই। অতিমূল্যবান অটো বায়োকেমিস্ট্রি ও সিবিসি সেল কাউন্টার মেশিন দু’টি অকেজো হয়ে পড়ে আছে রি-এজেন্টের অভাবে। দুটি সেমি অটো বায়োকেমিস্ট্রি মেশিন আছে। এ মেশিনের কিছু রি-এটেন্ট থাকায় তাই দিয়ে এনালগ পদ্ধতিতে প্যাথলজি পরীক্ষা করছেন অনভিজ্ঞ বেসরকারি কর্মচারীরা। যে রিপোর্টের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাছাড়া মূল্যবান ওই যন্ত্রগুলোও ব্যবহার হচ্ছে অনভিজ্ঞ কর্মচারীদের দ্বারা। এতে সংশয় রয়েছে। সবমিলে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, প্যাথলজি কনসালটেন্ট ডা. মো. হাসান আব্দুল্লাহ অবসরে গেছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. গোলাম মোস্তফা রয়েছেন অসুস্থ। এখন লোক নেই। মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপ্যালও কোন চিকিৎসককে দিচ্ছেন না। ফলে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে প্যাথলজি বিভাগে। যে কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি লোক আনার। এ সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পারবো।