বৈরী আহাওয়ার প্রভাব আগাম শীতের সবজিতে

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরে এবছর সময়মতো বাজারে আসছে না শীত মৌসুমের আগাম জাতের সবজি। অন্যান্য বছরে ঠিক এ সময়ে বাজারে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানান জাতের আগাম শীতকালীন সবজিতে ভরে ওঠে বাজার। এসব সবজি চাষের উপযুক্ত সময়ে অনাবৃষ্টি-খরা ও মাঝেমধ্যে ভারী বৃষ্টির কারণে কৃষকরা দেরিতে সবজি চাষ শুরু করেছে। তবে ইতোমধ্যে আগাম জাতের কিছু সবজি বাজারে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে চাষিরা জানান।
কৃষকরা বলছেন, সামনে বড় ধরনের বৈরী পরিস্থিতি না হলে নভেম্বর মাসের শুরুর দিকেই শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়তে থাকবে বাজারগুলোতে। আর মূল শীতকালীন সবজির জন্যে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত শীত মৌসুমের আগে যশোরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমিতে শীতের মৌসুমের হরেক রকমের সবজি চাষ হয়। অপেক্ষাকৃত এই সবজি বেশি দামে বিক্রি করে কৃষকও বেশ লাভবান হয়ে থাকে। গত মৌসুমে যশোর জেলায় ৭ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির আবাদ হলেও এ বছর সেখানে ৬শ হেক্টর জমিতে সবেমাত্র চাষ শেষ হয়েছে। শিম, বরবটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটোসহ নানান জাতের সবজির চারা রোপণ করে সেগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
সোমবার বিকেলে যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বিপুল পরিমাণ জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, লালশাক, সবুজ শাক ও পালং শাক, মুলাসহ বিভিন্ন সবজি রোপণ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতের সবজির চারা সবেমাত্র বড় হচ্ছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা সময়মতো সবজি চাষ শুরু করতে পারেনি।
নোঙরপুর মাঠে কথা হয় সবজি চাষি সাহাবুদ্দিনের সাথে। তিনিসহ কয়েকজন শ্রমিক ক্ষেতের সবজি পরিচর্যা করছেন। তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকাজুড়ে শুধুমাত্র সবজি চাষই বেশি হয়। অন্য বছরে এই সময়ে আমরা আমাদের ক্ষেতের বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা ও পালং শাক বাজারে তুলে অনেক লাভবান হতাম। কিন্তু এবছর চাষের উপযুক্ত সময়ে পানি না পাওয়ায় সময়মতো সবজি চাষ শুরু করতে পারেনি।
একই মাঠে কথা হয় সোহাগ হোসেন নামে আরেক কৃষক। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ক্ষেতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি লাগানোর পরপরই বৃষ্টির কারণে চারার ক্ষতি হয়। যেসব স্থানে চারা মরে গেছে সেখানে আবার নতুন করে চারা রোপণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। তারপর মাত্রারিক্ত শ্রমিকের মূল্যে সব মিলে আমরা নাজুক অবস্থায় আছি।
শরিফুল ইসলাম নামে আরেক সবজি চাষি বলেন, বাজারে সবজির যে দাম তা সহসা কমার সম্ভাবনা নেই। সবজির চাহিদা অনুযায়ী বাজারের ঘাটতি পূরণের একমাত্র উপায় ছিলো শীতকালীন আগাম জাতের সবজি চাষের। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আমরা পিছিয়ে আছি। এই সময়ে সবজি উৎপাদন হওয়ার কথা অথচ সেখানে তারা সবজি চাষ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, অতিমাত্রার গরমের কারণে শিম ক্ষেতে পোকার আক্রমণ চলছে। যেকারণে উৎপাদনও কম হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, ইতোমধ্যে বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজির সরবরাহ পেতে আরও কিছুদিন দেরি করতে হবে। তিনি বলেন, সবজি চাষ মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শুরুতে বৃষ্টির অভাবে কৃষক একটু দেরিতে শুরু করায় বাজারে আসতে দেরি হচ্ছে। তবে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে যে পরিমাণ সবজি চাষ হয়েছে তাতে সবজির কোনো ঘাটতি হবে না বলে তিনি দাবি করেন।