বেকারত্ব ঠেকাতে কর্মসূচি নিতে হবে

0

 

টানা দু’বছর করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে দেশে বেকার দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার সময় কর্মরত অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছিল। সংসার খরচ চালাতে না পেরে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছিল। বেকার হয়ে পড়াদের অনেকে মনে করেছিল, গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজসহ অন্তত কিছু একটা করা যাবে। তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। সেখানে কর্মসংস্থান হয়নি। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে পড়ে তাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনোভাবেই বেকারত্ব ঘোচাতে পারছে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার কারণে দারিদ্র্যের হার ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দরিদ্র হয়ে গেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, আগামী বছর পুরোবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে পড়তে পারে। অনেক দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে উঠবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এর আলামত ইতোমধ্যে পরিদৃষ্ট হয়ে উঠেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন মধ্যম ও গুরুতর মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। নতুন এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এতে গ্রামে থাকা কর্মপোযোগী বেকার মানুষ বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে শহরমুখী হবে। তার আলামত এখনই দেখা যাচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙনে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষও বাড়ছে। তারা মূলতঃ ঢাকামুখী হচ্ছে। এদের প্রত্যেকেই মনে করে, ঢাকা গেলে কিছু একটা করা যাবে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীতে বাড়ছে ভিড়। তাদের এই মরিয়া হওয়ার প্রবণতা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম এখন এ চাপ সামলাতে পারছে না। শহরে কমদামে খাদ্য বিক্রি ও ভিজিএফ কর্মসূচিও দরিদ্র হওয়া মানুষের জন্য যথেষ্ট হচ্ছে না। তারা ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের জীবনযাপন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এখানে কম দামের সরকারি খাদ্য সরবরাহ হয় না। এজন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। শুষ্ক এই মৌসুমে গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, বিভিন্ন প্রকল্পসহ কর্মসংস্থান হয় এমন উদ্যোগ নিতে হবে। এতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কাজ পেলে শহরমুখী মানুষের মিছিল কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হবে। পরিসংখ্যান বলছে. সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক যেসব কর্মসূচি রয়েছে, তা দিয়ে এখন কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র্য ঠেকানো সম্ভব নয়। সরকারের নিজস্ব আর্থিক সামর্থ্যর সীমাবদ্ধ বিষয় রয়েছে। বৈশ্বিক মন্দাবস্থার প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ঠেকানো এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতই দিন যাবে এ মন্দাবস্থা আরও নিম্নগামী হবে। তখন ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য ঠেকানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বগামী হবে। তাই, এখনই যদি কর্মসংস্থানের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে শোচনীয় পরিস্থিতির রাস টেনে ধরা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকার-বেসরকারি সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মন্ত্রী-এমপিসহ সকল জনপ্রতিনিধিকে উদ্যোগ নিতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে বেকারদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ঠেকাতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের বসে থাকলে হবে না। সরকারকে দ্রুত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে।