জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি রাখতে হবে

0

পৃথিবীতে এরই মধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা অনাহার ও অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। পৃথিবীর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল স্থায়ীভাবে তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলও জোয়ারের পানিতে ক্রমেই বেশি করে তলিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রার জন্য জাতিসংঘে পাঁচ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে গত বৃহস্পতিবার জলবায়ুুসংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এ প্রস্তাব দেন। তার অন্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা এবং প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন; দুর্বল দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত তহবিল সরবরাহ করা; দূষণকারী দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রশমন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের এনডিসি (জাতীয় নির্ধারিত অবদান) বাড়ানো এবং জলবায়ু শরণার্থীদের পুনর্বাসনকে একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রক্রিয়া ক্রমেই দ্রুততর হচ্ছে, বাড়ছে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা, তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল, বাড়ছে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা, একদিকে অতিবৃষ্টি, অন্যদিকে খরায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, মরুকরণ প্রক্রিয়া তীব্রতা পাচ্ছে এমনি বহু কারণে মানবজাতি আজ এক ভয়ানক সংকটে। অনাহার, অপুষ্টিসহ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করছে। সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। ইউনিসেফের হিসাবে শুধু বাংলাদেশেই দুই কোটি শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রোপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিযোজন এবং সহিষ্ণুতার বিষয়ে বিনিময় করার মতো কিছু ধারণা ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের গৃহীত ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সরকার দেশে চার হাজার ২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে প্রস্তুতি সহজ করতে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ আরো অনেক েেত্রই সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রবল ঝুঁকিতে থাকা অনেক দেশই নিজেদের রার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক উদ্যোগের মাধ্যমেই শুধু একে মোকাবেলা করা যাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো তাদের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা না কমালে উষ্ণায়নের গতি কমানো যাবে না। সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত দেশগুলো প্রতিশ্রুত সহায়তা না পেলে অভিযোজন প্রক্রিয়া ঠিকমতো এগিয়ে নিতে পারবে না। এ জন্য প্যারিস চুক্তির শর্তগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি, যা অনেক উন্নত দেশই ঠিকমতো করছে না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সমর্থন পাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সবাই একযোগে কাজ করবেন।