টানা বৃষ্টিপাতের আভাসে দুশ্চিন্তায় সবজি চাষি

0

আকরামুজ্জামান ॥ গত দুদিন ধরে যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এটি ভারি বর্ষণে রূপ না নিলেও মাঝারি বৃষ্টিপাতে রূপ নিতে পারে। কৃষি বিভাগের লোকেরা বলছেন, ভারি বৃষ্টিপাত হলে এ অঞ্চলের সবজি ক্ষেত নিশ্চিত বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে এবছর শীতকালীন আগাম জাতের সবজির উৎপাদন একেবারেই কমে যাবে। আর এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে খুচরা ও পাইকার বাজারে।
আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়ে উঠছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বাংলাদেশের এ অঞ্চল ছাড়াও ভারতের বিহার পশ্চিম বঙ্গ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মাঝারি বৃষ্টির বার্তা নিয়ে এই বায়ুচক্র সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে আগামী দুই তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন।
এদিকে আশ্বিনের অসময়ের এ বৃষ্টিপাতের কারণে এ অঞ্চলের সবজি চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। সবজি চাষিরা বলছেন একেতো এবছর তারা দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে সময়মতো সবজি চাষ করতে না পেরে চরম ক্ষতির মুখে রয়েছেন। ক্ষতি পুশিয়ে নিতে তারা ক্ষেতে সাধ্যমত সবজি চাষ করলেও তারা শেষ সময়ে এসে বৃষ্টির কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার নোঙরপুর এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা সবজি চাষিরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আসছি। ঝড়-বৃষ্টি, খরায় আমাদের সবজি আবাদের ক্ষতি হয়ে লাভ করতে পারছেন না বলে জানান তিনি। এ বছর সবজি চাষের উপযুক্ত সময়ে কাঙ্খিত বৃষ্টি না পেয়ে পিছিয়ে পড়েন তারা। এখন আবার বৃষ্টির হওয়ায় মহা চিন্তায় আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, গত দুদিনে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। তবে এটি যদি ভারি বৃষ্টিপাতে রূপ নেয় তাহলে এ অঞ্চলের শ শ বিঘা জমির বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, বেগুনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হবে। যে ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হবেনা।
একই এলাকার সবজি চাষি শহর আলী বলেন, এর আগে বৃষ্টির অভাবে পটল ক্ষেতে পানি জমে গেয়ে গাছ মরে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে সেসব ক্ষেতে আমার নতুন করে পরিচর্যা শুরু করেছি। কিন্তু এখন যদি আবার ভারি বৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। আমার মতো এ অঞ্চলের শ শ সবজি চাষির পথে বসা ছাড়া কোনো পথ থাকবেনা।
সবজি চাষিরা বলেন, এ বছরটা সবজি চাষিদের জন্য অনেকটা খারাপ সময় যাচ্ছে। একের পর এক বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। তারপরও তারা লাভজন পর্যায়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তারা বলেন, এমনিতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের ক্ষেতের সবজির উৎপাদন কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে প্রতিটি সবজির অনেক বেশি। এ অবস্থায় কৃষক বৃষ্টি একটু কম হওয়ায় পুরোদমে সবজি চাষ শুরু করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, যশোরের মাঠে মাঠে এখন শীতের সবজির পরিচর্যা চলছে। এসব সবজি চাষের জন্য বৃষ্টিরও প্রয়োজন আছে। তবে তা ব্যাপক হলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত যশোরে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে সবজির জন্য কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এটি বিলম্বিত হলে অবশ্যই ক্ষতি হবে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা করেন।
চলতি শীত মৌসুমে যশোরে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।