নড়াইলে ২৭ দিন পর গৃহবধূ সুমাইয়া হাসপাতাল ছাড়লেও আতঙ্কে পরিবার

0

নড়াইল সংবাদদাতা॥ নড়াইল সদর উপজেলার পলইডাঙ্গা গ্রামে স্বামীকে মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসাধীন গৃহবধূ কাজী সুমাইয়া ইসলাম ২৭দিন পর বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার দুপুরে নড়াইল সদর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন তিনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বামী আশিকসহ শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ গৃহবধূ সুমাইয়াকে বেদম মারধর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ওইদিন হাসপাতালে ভর্তি হন সুমাইয়া। তবে সুমাইয়াকে নির্যাতনের মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়েছেন বলে জানান তার (সুমাইয়া) বড় ভাই কাজী রমজান। এমনকি জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক পরিচয়েও মামলা তুলে নেয়ার জন্য বার বার বলা হয়েছে। সুমাইয়া বাড়িতে ফেরার আগে বুধবার সকালে এক ব্যক্তি ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে সুমাইয়ার ভাই রমজানসহ তার পরিবারের সঙ্গে এলোমেলো কথা বলেন। সাংবাদিক পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তি মোবাইল ফোনেও সুমাইয়ার ভাই রমজানের সঙ্গে উল্টোপাল্টা কথা বলেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। তাই ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সুমাইয়াসহ তার পরিবার। আগামী ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন সুমাইয়া।
এদিকে সুমাইয়ার স্বামী আশিক খান, বাবা মুনসুর খানসহ চারজনের নামে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে নির্যাতিতার পিতা কাজী নজরুল ইসলাম বাদশাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বাদশা সদর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। জিডিতে নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শহরের শেখ রাসেল সেতুর কাছে পৌঁছালে বিবাদীসহ (সুমাইয়ার শ্বশুর) অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজন লোক মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন। মামলা তুলে না নেয়া হলে খুন-জখম করবেন বলে শাসিয়ে যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ মাস আগে নড়াইল সদরের পলইডাঙ্গা গ্রামের মনসুর খানের ছেলে আশিক খানের সঙ্গে লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা গ্রামের নজরুল ইসলাম বাদশার মেয়ে কাজী সুমাইয়া ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত। সংসারে সুখের কথা বিবেচনায় স্বামীর মাদকাসক্তের বিষয়টি গোপন রাখলেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়। স্বামীকে মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সুমাইয়া। এ কারণে প্রায়ই সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো। এরই জের ধরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আশিক তার স্ত্রীকে কিল-ঘুষি ছাড়াও রড দিয়ে বেদম মারধর করে পালিয়ে যান।
এদিকে আশিকের পিতা-মা ছেলেকে শাসন করেন না বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ সুমাইয়া। বরং সুমাইয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ তাকে প্রায়ই শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেন।
সুমাইয়ার বড় ভাই কাজী রমজান বলেন, আমার বোনকে নির্যাতনের ঘটনায় আশিকসহ তার পিতা-মা ও বোনের নামে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে সদর থানায় মামলা হয়েছে। এরপর আসামিরা গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হলে মূল অভিযুক্ত আশিককে বিজ্ঞ বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলেও অন্যরা জামিন পান। আদালত থেকে বের হয়ে ওইদিনই (১৮ সেপ্টেম্বর) আশিকের পিতা মনসুর খান আমার পিতাকে (কাজী নজরুল ইসলাম) মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় আশিকের আত্মীয়-স্বজন আমাকেও মামলা তোলার জন্য হুমকি দিচ্ছেন।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ সারথি রায় জানান, সুমাইয়ার মাথা, ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাকে অনেকদিন চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নড়াইল সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মাহমুদুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূর পিতা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মূল অভিযুক্ত আশিক খান এখনো কারাগারে আছেন।