কলারোয়ার সোনাবাড়ীয়ায় গ্রামীণ সড়কে বৃষ্টি হলেই হাঁটু কাদা

0

 

কলারোয়া(সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা ॥ রাস্তা তো নয় যেন ময়দার খামি। পা দিলেই হাঁটুর নিচ পর্যন্ত দেবে যায় ! এক পা ঢুকিয়ে তো অন্য পা তুলে আবার ফেলতে লাগে কয়েক মিনিট। এভাবেই চলছে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৫নং দক্ষিণ সোনাবাড়ীয়া ওয়ার্ডের শ শ মানুষের জীবন। উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও এখানে কাদায়-ভরে রয়ে গেছে রাস্তাটি। আর এসব কাঁচা রাস্তাগুলোর জন্য বর্তমান সময়ে এসেও এলাকাবাসীর পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তায় পানি আর নরম মাটিতে লোকজনের হাঁটা চলায় চারিদিকে কাদায় একাকার হয়ে যায়। গ্রামে বিকল্প কোন রাস্তার ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় এখানকার স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও বয়োবৃদ্ধসহ সকল শ্রেণি- পেশার নাগরিকদের।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ সোনাবাড়ীয়া (লাউডুবি) মৃত মহফেল মহুরির বাড়ি থেকে পূর্ব ভাদিয়ালী আইনের মোড় পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এবং সাবানার মোড় থেকে রাজপুর চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা বর্ষায় ব্যবহারে পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় আরশাদ নামে এক ব্যক্তি জানান, বর্ষা এই এলাকার মানুষের জন্য আতঙ্ক আর ভয়ের আরেক নাম। বর্ষা হলেই রাস্তায় হাঁটু কাদা। কি দুর্বিসহ জীবন আমাদের তা বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না। কাদা আতঙ্কে এ গ্রামে ঢোকে না কোনো অ্যাম্বুলেন্স। এই এলাকার ছেলেমেয়েরা বর্ষার সময়ে নিয়মিত স্কুল-কলেজে যেতে পারে না। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষা জীবন।
তিনি আরও বলেন, মাঝে এক বৃদ্ধা স্ট্রোক করেন। তাকে দ্রুত হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স এখানে ঢুকতে পারেনি। পরে তাকে কাঁধে করে কাদা রাস্তা পার করা হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়, এমন বহু ঘটনার স্বাক্ষী এখানকার মানুষ।
এনজিওতে কর্মরত ওই এলাকার জাহিদ নামে এক যুবক বলেন, আমরা যেন একটা অভিশপ্ত জীবনযাপন করছি। চারিদিকে এত উন্নয়ন আর এখানে কেন এমন অবিচার। সত্যি কথা বলতে গেলে অনেক ছেলেমেয়ের বিয়ে আটকে আছে রাস্তার এমন বেহাল দশার কারণে।
ইকরামুল ইসলাম নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখছি আমাদের রাস্তার এই দশা। আমরা বর্ষা মৌসুমে ঠিক মতো কলেজে যেতে পারি না। একরকম ঘরবন্দী জীবনযাপন করতে হয় আমাদের।
মোজাম্মেল নামে এক কৃষক বলেন- আমাদের কষ্ট, আহাজারি কেউ শুনবে না। আমাদের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না। নিজ চোখে দেখতে হবে। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। কৃষি পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে পারি না।
এ বিষয়ে ৫নং দক্ষিণ সোনাবাড়ীয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম বলেন, ইউসুফের মোড় থেকে আইনের মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির কোড ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরের মধ্যে এই রাস্তার কাজ শুরু হবে।
৬নং সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেনজির হোসেন হেলাল বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। সাবানার মোড় থেকে রাজপুর অভিমুখী রাস্তাটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। বর্ষা মৌসুমে এখানকার মানুষ এক প্রকার ঘরবন্দী হয়ে যায়। কোনো অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে চায় না এখানে। অসুস্থ হয়ে অনেকে সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় মারা গেছেন। এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণ কৃষি ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা সময়মতো বাজারজাত করতে পারেন না। এতে করে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পূর্বে এই রাস্তা নিয়ে কেউ কোনো কাজ করেনি। আমি ইতোমধ্যে রাস্তাটি কার্পেটিংয়ের জন্য আমাদের এমপি মহোদয়ের নিকট আবেদন করেছি। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ওই রাস্তার একটি প্রকল্প দিয়েছেন। এবার বরাদ্দ পেলেই ওই রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।