অভয়নগরে মামুন হত্যার প্রতিশোধ নিতে নুর আলী শেখ মেম্বারকে হত্যা, ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ মামুন আকুঞ্জী নামে এক যুবককে হত্যার প্রতিশোধ নিতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুর আলী শেখকে গুলি করেছে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া কিলার, পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতাসহ মোট ১৪ জনের সম্পৃক্তা উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে ওই ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে চাঞ্চল্যকর নুর আলী শেখ হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা অভয়নগর থানা পুলিশের এসআই মো. নজরুল ইসলাম। এছাড়া চার্জশিটে জিয়াদ শেখ ও মুসা গাজী নামে এজাহারভুক্ত দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন, অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের মৃত কাদের দফাদারের ছেলে মুরাদ শেখ (৫০), মৃত ইলাহী মোল্লার ছেলে হুমায়ুন মোল্লা (৪৬), রানাগাতি গ্রামের আবছার আকুঞ্জীর ছেলে মিজানুর রহমান মিজান আকুঞ্জী (৩৫), শুভরাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ গাজীর ছেলে সোহাগ গাজী (২৩) ও মিজান গাজী (২৭), মৃত বিজয় কৃষ্ণ দাসের ছেলে উজ্জল কুমার দাস (৪১), নুর মোহাম্মদ ওরফে মিঠু আকুঞ্জীর ছেলে আরমান আকুঞ্জী (২৯), শুভরাড়া মাঠপাড়ার মৃত এলাহী বক্স শেখের ছেলে উজির আলী শেখ (৬১), শুভরাড়া দক্ষিণপাড়ার মৃত ইলাহী মোল্লার ছেলে ফিরোজ মোল্লা (৩৫), ইয়াকুব শেখের ছেলে তুরান শেখ (৪২) ও নছর শেখ (৩৮), রানাগাতি গ্রামের সোবহান মল্লিকের ছেলে নান্নু মল্লিক (৩৯), নেউলী গ্রামের গফ্ফার গাজীর ছেলে সুলতান গাজী (২৯) ও নাউলী উত্তরপাড়ার মোসলেম আকুঞ্জীর ছেলে ফুরকান আকুঞ্জী (৩১)। এর মধ্যে নছর শেখ ও তুরান শেখকে পলাতক এবং অন্যদের আটক দেখানো হয়েছে চার্জশিটে। এছাড়া জিয়াদ শেখ ও মুসা গাজী নামে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে। জিয়াদ শেখ শুভরাড়া গ্রামের মৃত কাদের দফাদারের ছেলে এবং মুসা গাজী একই গ্রামের আজগার গাজীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, ২০২১ সালের ৭ মার্চ রাত ৮টার দিকে শুভরাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুর আলী শেখ তার ছেলে ইব্রাহিমকে (১৪) সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে স্থানীয় বাবুরহাট বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। কিছুদূর পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এবং নুর আলী শেখের মাথা ও বুকে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে জখম হয় ইব্রাহিম। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোছা. তহমিনা খাতুন ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনকে আসামি করে ৯ মার্চ অভয়নগর থানায় একটি মামলা করেন। আসামিরা হলেন, শুভরাড়া গ্রামের মুরাদ শেখ, জিয়াদ শেখ, মুসা গাজী ও হুমায়ুন মোল্লা। মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। এছাড়া তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। নুর আলী শেখ এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় তাদের সাথে তার শত্রুতার সৃষ্টি হয় এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই জের ধরে নুর আলী শেখকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে মামলার তদন্তকালে পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি ছাড়াও হত্যাকান্ডে আরো কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পায়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় আটক ১২ জন ও পলাতক ২ জনের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া, পরিকল্পনাসহ অর্থদাতা হিসেবে সম্পৃক্তার পাওয়া যায়। তবে এজাহারভুক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, নুর আলী শেখ হত্যার প্রায় ৪ মাস আগে অভিযুক্ত আরমান আকুঞ্জীর বড়ভাই আল মামুন আকুঞ্জীকে কে বা কারা গুলি চালিয়ে হত্যা করে। অভিযুক্ত আরমান আকুঞ্জী ও মিজান আকুঞ্জীর সন্দেহ ওই হত্যাকান্ড নুর আলী শেখ ঘটিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে তারা নুর আলী শেখকে হত্যার মাধ্যমে আল মামুন আকুঞ্জী হত্যার প্রতিশোধ নেন। হত্যার আগে তারা আরো কয়েকজনের সাথে গোপন বৈঠক করেছিলেন। আর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি কেনার জন্যে অভিযুক্ত উজ্জল কুমার দাস ১০ হাজার টাকা ও উজির আলী শেখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এছাড়া অস্ত্র কেনার জন্যে অভিযুক্ত হুমায়ুন মোল্লা ও মুরাদ শেখও টাকা দিয়েছিলেন।