আগাম জাতের শিম চাষে বিপর্যয় যশোরে

0

আকরামুজ্জামান ॥ বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবছরও আগাম জাতের শিমের ফলন বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। এতে হতাশায় পড়ছেন যশোরের চাষিরা। অন্যান্য বছরে ঠিক এই সময়ে যশোরের বাজারগুলোতে স্থানীয় চাষিদের ক্ষেতের শিমে সয়লাব হয়ে গেলেও এখন তা আর মিলছেনা। এক বিঘা জমিতে ৫-৬ কেজিও শিম ফলাতে পারছেন না চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, শিম চাষের উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি না পাওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা মাত্রারিক্ত বেড়ে যাওয়া এ পরিস্থিতি হয়েছে। চলমান বৃষ্টি থেমে গেলে গাছে নতুন করে ফুল ও ফল আসতে পারে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন।
কৃষি বিভাগের হিসেবে চলতি বছরে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ হয়েছে। যশোরের বারীনগর, মানিকদিহি, হৈবতপুর, খাজুরা, তীরেরহাট, চুড়ামনকাঠি, শাহবাজপুর ও চৌগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ শিমের ফুলে ভরে গেছে । পুরো মাঠ জুড়ে সবুজ আর বেগুনি রঙের বাহার। তবে এবছর সময়ে বৃষ্টি না হওয়া, অসময়ে বৃষ্টিপাত ও তীব্র তাপমাত্রার কারণে শিমের মারাত্মক ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরে এই সময়ে তারা প্রতি বিঘা জমি থেকে সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ মণ শিম তুলে বাজারে নিতে পারলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। বিরূপ আবহাওয়া ও পোকার আক্রমণে ফলন বিপর্যয়ের কারনে তারা বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুনছেন।
সদর উপজেলার তীরের হাট এলাকার মাঠে কথা হয় শিম চাষি রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, এবছর শিম চাষ করে তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। একদিকে অনাবৃষ্টি তারপর অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে গাছে ফুল দাঁড়াতে পারেনি। যেকারণে কোনো গাছে শিম ধরেনি। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। গত এক মাস আগে প্রতিটি গাছে প্রচুর ফলন আসে। তবে বর্তমানে গাছে কোনো ফুল ও ফল দাঁড়াচ্ছেনা। ফলে বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ কেজিও শিম পাওয়া যাচ্ছেনা।
একই কথা জানান, শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর তাদের শিম চাষ করে লাভতো দূরের কথা পুঁজি রক্ষা করতেও পারছেন না।, অন্যান্য বছরে এই মৌসুমে শিম চাষ করে বিঘাপ্রতি তারা এক থেকে দুই লাখ টাকা আয় করলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এখন একবিঘা জমিতে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছেন না। ফলে শিম চাষ করে তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। তিনি বলেন, দিনে-রাতে তাপমাত্রা একই রকম থাকায় শিম চাষের জন্যে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিম চাষের জন্যে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলে ভালো হয়। কিন্তু বর্তমান আবহাওয়া শিম চাষের জন্যে মোটেও অনুকূলে নয়।
এদিকে চলমান বৃষ্টিতেও শিমের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান চাষিরা। একই এলাকার চাষি শফিয়ার রহমান জানান, গত কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কমছে বটে। তবে এতেও শিম ক্ষেতের ক্ষতি হচ্ছে। গাছে যেসকল ফুল আছে তা পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে শিমের পরাগায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে ফুল ফলে পরিণত হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাজারে শিমের দাম কৃষকের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। কিন্তু পোকার আক্রমণে ফলন না থাকায় শিম তুলতে পারছেন না। অথচ এই মৌসুমে একবিঘা জমিতে দুই থেকে তিন মণ পর্যন্ত শিম পেয়েছেন তারা।
এ পরিস্থিতির জন্যে পরিবর্তিত আবহাওয়াকে দায়ী করেছে কৃষিবিভাগ। এ অবস্থায় পোকা দমনে কৃষকদের জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শও তাদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে চাষাবাদসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। এরপরও শতপ্রতিকূলতা পেরিয়ে চাষিরা এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শিমের ফলন বিপর্যয় হলেও চলমান বৃষ্টি থেমে গেলে নতুন করে গাছে ফুল আসবে এবং তা পরাগায়নের মাধ্যমে শিমের ফলন বাড়বে। ফলে চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।