যশোর ভাতুড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে অধ্যক্ষের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

0

 

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলকে ভাতুড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি রাখতে মাঠে নেমেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. আরিফুজ্জামান। তিনি তার এই উদ্দেশ্য বাস্তায়নের জন্য জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, এমন অভিযোগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক মহল থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর। তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানের এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর।
অভিভাবক জাহাঙ্গীর হোসেন, ওহিদুজ্জামান লিটন স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ এবং অভিভাবক মহলসহ এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, ভাতুড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। দুই থেকে তিন দফা এডহক কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম চলে আসছে। সর্বশেষ আনোয়ার হোসেন বিপুল ওই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ওই পদে স্থায়ীভাবে থাকতে চান। আর তাকে ওই পদে রাখতে অত্যান্ত সুকৌশলে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মো. আরিফুজ্জামান। তিনি অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের তফসিল গোপন করেন নাম সর্বস্ব একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে। গেল ২৫ আগস্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। চলতি মাসের ৪, ৫ এবং ৬ তারিখ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অধ্যক্ষ ৪ তারিখ আনোয়ার হোসেন বিপুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ জনের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেন। পরদিন ৫ তারিখ জাহাঙ্গীর হোসেন, ওহিদুজ্জামান লিটন, মহসিন আলী, বিল্লাল হোসেন ও আতিয়ার রহমান মনোনয়ন ফরম ক্রয় করতে গেলে অধ্যক্ষ তাদের সাফ জানিয়ে দেন কোন মনোনয়ন দেয়া হবে না। একদিন পর ঘোষিত তফসিলের শেষ দিনে তারা পুনরায় মনোনয়ন ফরম কিনতে গেলে অধ্যক্ষ মো. আরিফুজ্জামান তাদের একই কথা জানিয়ে দেন। এরপর থেকে তিনি আর প্রতিষ্ঠানে আসেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,তার সহকর্মী থেকে শুরু করে অভিভাবক মহল এবং এলাকাবাসী। তার মুঠোফোন পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছেন।
রোববার এই প্রতিবেদক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখেন অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলছে। একজন অফিস সহায়ক বলেন, স্যার নেই। তার মুঠোফোনের নাম্বার চাইলে তিনি বলেন, স্যার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। এদিকে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রোববার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। যেটি অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক মহল থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর অভিযোগ অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বিপুলকে সভাপতি করতে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেছেন। তিনি যে ভোটার তালিকা করেছেন, সেখানেও তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। ভাতুড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজে সন্তান পড়ে না এমন লোককে অভিভাবক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় রোববার অভিভাবক ও এলাকাবাসী ভাতুড়িয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এসময় তারা বলেন, দলমত নির্বিশেষে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ। অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বিপুলকে সভাপতি করতে জালজালিয়াতির মাধ্যমে আাগামী ২২ তারিখ যে প্রহসনের নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছেন আমরা সেই নির্বাচনের স্থগিতের দাবি জানাই। একই সাথে পুনরায় তফসিল দিয়ে সকলে অংশের গ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণযাগ্য নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন তারা।
এদিকে অধ্যক্ষের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয় তার বক্তব্য জানার জন্য তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পাওয়ায় তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, যেহেতু তফসিল ঘোষণা করা হয়ে গেছে সেহেতু তফসিল অনুযায়ী আমাকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কোন ত্রুটি থাকলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ কুমার বলেন, বিষয়টির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজ সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।