জি-৩ অধিক বর্ধণশীল রুই মাছ চাষে অভাবনীয় সাফল্য যশোরের চাষিদের

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ অধিক বর্ধণশীল রুই মাছের পরীক্ষামূলক চাষে যশোরে চাষি পর্যায়ে ব্যাপক সফলতা দেখা গেছে। প্রচলিত অন্যান্য জাতের মাছের চেয়ে ৩০ শতাংশ বর্ধণশীল এ মাছ চাষে ব্যাপক আশা দেখছেন মাছ চাষিরা। যশোর শহরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবছর এ মাছ চাষে সফলতা পেয়েছেন তারা। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত জি-৩ এ রুই মাছের জাত সারাদেশে মাছ চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের উদ্যোগে হালদা, পদ্মা, ও যমুনা নদী হতে উৎপন্ন রুই মাছ এবং বাণিজ্যিকভাবে সমাদৃত একটি হ্যাচারি থেকে সংগৃহিত রুই মাছের সাথে জি-৩ রুই মাছের বৃদ্ধির হার তুলনা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। পরীক্ষামুলক চাষের জন্য এই তিন জাতের রুই মাছ ২০২০ সালের একই সময়ে উৎপাদন করা হয়। উৎপন্ন রেনু ও পোনা যশোরে অবস্থিত ওয়ার্ল্ডফিশ কার্প জেনেটিক ইম্প্রুভমেনট কেন্দ্রে ৫৪টি হাপায় লালন-পালন করা হয়। মাছগুলি উপযুক্ত সাইজে উপনীত হলে তাদেরকে মেশিন এর সাহায্যে শনাক্তকরণের জন্য ‘প্যাসিভ ইনটিগ্রেটেড ট্রান্সপোনডার’ বা পিট নামক একপ্রকার যন্ত্রের সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়। তারপর পোনা মাছগুলিকে একত্রে একটি পুকুরে চাষ করা হয়। পরীক্ষামূলক ফলাফলের পর তৃতীয় প্রজন্মের এই জি-৩ রুই মাছ একই বছরে যশোরের ৬জন হ্যাচারি মালিকদের মাঝে প্রত্যেককে ২০০ গ্রাম করে ওই মাছের রেনু দেয়া হয়। এরপর সেই রেনুগুলো হ্যাচারিতে বড় করে তাদের নিজস্ব পুকুরে চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন চাষিদের মাঝে সরবরাহ করেন।
এ ব্যাপারে যশোর চাঁচড়া সবজিবাগ এলাকার রুপালী ফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী শেখ মেজবাহ উদ্দীন বলেন, জি-৩ রুই মাছ প্রচলিত রুই মাছের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাং বেশি বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিকভাবে আমি এই মাছের চাষ করেছি এবং আরও কিছু চাষির মাঝে এ মাছের পোনা সরবরাহ করেছি। প্রথম বছরেই মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি মাছ ৩ কেজি ৫০ গ্রাম ওজন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে চাঁচড়ার ফাহাদ মৎস্য হ্যাচারির ফারুক নামে আরেকজন মাছ চাষি ৪ হাজার পিস এ মাছের পোনা নিয়ে পুকুরে চাষ করেন। তার পুকুরে প্রতি মাছই ১১ মাসের ব্যবধানে ৩ থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজন হয়েছে। কোনোটা এর চেয়েও বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান।
চাঁচড়া মা ফাতিমা ফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খান বলেন, জি-৩ রুই মাছ বাংলাদেশের মাছ চাষকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘ মাছ চাষের জীবনে এমন বেশি বর্ধণশীল মাছ আর কখনও দেখিনি। আমরা চাঁচড়ার ৬ জন হ্যাচারি মালিক এ মাছ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছি। আমার পুকুরে এখনও জি-৩ এর ৪৬০০ টি ব্রুড রয়েছে। যার প্রতিটিই তিন কেজির উপরে ওজন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ফিশ যশোরের ফিশ ব্রিডিং এন্ড রেসার্স প্লাটফার্ম ম্যানেজার মাসুদ আকতার বলেন, পরীক্ষামূলক চাষের ফলাফলের পর ২০২০ ও ২০২১ সালে কিছু সংখ্যক হ্যাচারি ও নার্সারিকে জি-৩ রুই মাছের জাত সরবরাহ করা হয়। এর পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ফিশ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ১৯টি আধা-বাণিজ্যিক খামারে জি-৩ রুই মাছের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে প্রতি মাসে নমুনায়ন পদ্ধতিতে মাছের বৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত জি-৩ রুই মাছ চাষকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জেলা মৎস্য বিভাগ। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, তৃতীয় প্রজন্মের এ মাছ চাষের চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারণে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে ওয়ার্ল্ডফিশের এ গবেষণা যাচাই-বাছাই যা দেখেছি উন্নত পন্থায় এ মাছের অধিক বর্ধণশীল মাছ চাষ কৃষক পর্যায়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ঠিক একই পদ্ধতি দ্রুত বর্ধণশীল মাছের জাত নির্নয় করে সেখানকার চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছে। আশা করছি বাংলাদেশের মাছ চাষিরাও এর মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।