অস্বস্তির যানজটে ভোগান্তি যশোরে

0

আকরামুজ্জামান ॥ দিন দিন প্রকট হচ্ছে যশোর শহরের যানজট। বিশেষ করে শহরের প্রবেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। শহরবাসীর অভিযোগ, অতিরিক্ত ইজিবাইক, অটোরিকশার চাপের পাশাপাশি অপরিকল্পিত যানবাহন চলাচলের কারণে ঐতিহ্যবাহী এ শহরে মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত পৌরসভা থেকে ৩ হাজার ২৭২ টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর বাইরে ইজিবাইকের মতো দেখতে আরও ২০টি অটোরিকশাকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সবমিলে শহরে ৫ হাজারেরও বেশি ইজিবাইক চলাচল করে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৫০০ প্যাটেল চালিত রিকশা ও আরও ৫০০ লাইসেন্সবিহীন অটো রিকশা। এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশার জন্যে কোনো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় চালকরা অনেকটা অঘোষিতভাবেই শহরের দড়াটানা মোড়, মণিহার মোড়, চৌরাস্তা মোড়, ঈদগাহ মোড়সহ প্রতিটি মোড় ও জনবহুল স্থানকে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এতে ছোট্ট এই শহরে যানজটের তীব্র চাপে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ইজিবাইক-অটোরিকশা ছাড়াও প্রতিদিনই যশোর শহরে গ্রামাঞ্চল থেকে নসিমন, করিমন, আলমসাধুসহ পিকআপে করে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে শহরে প্রবেশ করে। শহরের ব্যস্ততম সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই গ্রামে তৈরি এসব যান চলাচল করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যে কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে।
মঙ্গলবার যশোর শহরের মণিহার মোড়ে সকাল সাড়ে ১১ টায় শুরু হয় তীব্র যানজট। এসময় মণিহার মোড় থেকে আরএন রোড এলাকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা যানজটের পড়ে অন্তহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষকে। সরেজমিনে ওই সময়ে সেখানে গিয়ে দেখা যায় বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কষ্ট করছেন পথচারী ও বিভিন্ন বাহনের যাত্রীরা। ট্রাফিক পুলিশকে সড়ক নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এসময় কয়েকজন পথচারী ক্ষোভের সাথে বলতে থাকেন স্বস্তির শহরটা আজ অস্বস্তিতে রূপ নিচ্ছে। শরিফুল ইসলাম নামে একজন মোটরসাইকেলচালক বলেন, সেই সাড়ে ১১ টা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ১০ গজ পথও এগুতে পারিনি। তিনি বলেন, শহরে অপরিকল্পিতভাবে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচলের কারণে এ পরিস্থতি তৈরি হয়েছে।
ইজিবাইকে বসে থাকা শাহিদা আক্তার নামে এক নারী বলেন, তার মেয়ে যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ছুটি হবে। অথচ তাকে এখানে আটকে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সাড়ে ১১ টার পর যশোর শহরের প্রায় এলাকাতেই এভাবে যানজট শুরু হয়। এই সময়টা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছুটি হয়। এই সময়ে শহরের ঈদগাহ মোড়, এইচএমএম রোড, মাইকপট্টি এলাকায় একবার যানবাহনের জট বাধলে তা আর সরানো সম্ভব হয়না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
শহরের মণিহার এলাকায় কর্মরত একজন ট্রাফিক পুুলিশ ক্ষোভের সাথে বলেন, শহরের জায়গার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ডিভাইডার নেই। যেকারণে অনওয়ে রাস্তা না থাকায় যানজট কন্ট্রোল করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপালনে হিমশিম খেতে হয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার সহকারী পরিদর্শক (লাইসেন্স) মঞ্জুর হোসেন রতন জানান, শহরে লাইসেন্সবিহীন যে সকল ইজিবাইক বা অটোরিকশা আছে সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত রয়েছে। মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় সে দিক বিবেচনায় লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্ককতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।