মণিরামপুরে বৃষ্টির অভাবে এখনও অনেক কৃষক আমন ধান চাষ করতে পারেনি

0

 

ওসমান গণি. রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই তীব্র তাপদহে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে উপজেলায় আমন চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চাষিরা বাধ্য হয়ে পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন ডিজেলচালিত স্যালো পাম্পের সাহায্যে। কিছু সংখ্যক চাষি ব্লকের আওতায় বাঁওড়ের পানি দিয়ে আমন চাষ করতে পারলেও পানির সংকটে এখনও অনেকেই চাষাবাদ করতে পারেনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে বৃহত্তর এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়নে ২২হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তুু ২ ভাদ্র পর্যন্ত ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন লাগানো হয়েছে। পানির অভাবে এখনও পর্যন্ত ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়নি। তবে এখনও জমিতে আউশ ধান এবং পাট থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। চলতি রোপা আমন মৌসুমে সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১লাখ ১৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।
কৃষকেরা বলছেন, জুলাই মাসের শুরু থেকে উপজেলায় রোপা আমনের চাষ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৫ আগস্টে। কিন্তুু তীব্র তাপদহের কারণে এবার সময়মত চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে চলতি মৌসুমে আমনের ফলন একেবারেই কম হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় কৃষকদের। ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের শাহজাহান আলী, শহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, গ্রামের চাষি মাস্টার বাবুল আক্তার, ফারুক হোসেন, মেহেদি হাসান টুটুল, চালুয়াহাটি ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, মুনছুর আলী, মাহবুর রহমান, কামাল হোসেন, মোবারকপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম টুলু, সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ আলী খান, ইউসুফ আলী, মশ্মিমনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মামুনুর রশীদ, সোহরাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মশিয়ার রহমান, মশ্মিমনগর গ্রামের ফারুক হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ খান, মিলন হোসেন খান, খেদাপাড়া ইউনিয়নের হেলাঞ্চি গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমান, আতিয়ার রহমান, আজিবর রহমান, তুষার হোসেন, হরিহরনগর ইউনিয়নের ডা. ইলিয়াস কবির, শৈলেন বাবু, আব্দুর রাজ্জাক, হাতেম আলী, কমল কুমার, রোহিতা ইউনিয়নের আমিনুর রহমান, রূপচাঁন আলী, রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শের আলী ও আব্দুস সাত্তার জানান, এখনও বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। আর ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন চাষে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টির হয়েছে। এদিকে আমন ধানের চারার বয়স বেশি হলে সেই চারা রোপণে দেরি হওয়ায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। ফলে সময়মত আমন ধানের চারা রোপণ করার জন্য বৃষ্টির পানির দিকে না তাকিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে রোপা আমনের চারা রোপণের কাজ শুরু করে দিয়েছে এ উপজেলার চাষিরা।
ঝাঁপা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম রসুল চন্টা বলেন, সাধারণত জুন মাসের শেষের দিকে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হলেও জুলাই মাসের প্রথম থেকে পুরোদমে জমিতে চারা রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়। জুলাই মাসের প্রথম থেকে এ অঞ্চলের কৃষকেরা পুরোদমে আমনের চারা রোপণ শুরু করে থাকেন। কিন্তুু চলতি আমন মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত চারা রোপণের কাজ শুরু করা যায়নি। চারা বড় হয়ে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে সেচের মাধ্যমে জমি প্রস্তুুত করে আমনের চারা রোপণের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। কারণ এখনও ক্ষেতে আউশ ধানসহ পাট রয়েছে। এগুলো কাটার পর রোপা আমনের চারা রোপণের কাজ শুরু হবে। আর বর্তমান বাজারে সারের কোন সংকট নেই। তবে দাম একটু বেড়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।