যবিপ্রবির সাবেক ভিসি পুত্র আবিরের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন

0

স্টাফ রিপোর্টার,মণিরামপুর(যশোর)॥ ঢাকার হাতিরঝিলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের(ভিসি) ছেলে আবিরের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। সিআইডি দাবি করেছে আবির আত্মহত্যাই করেছে। তবে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আবিরের মা মামলাটি পুনঃবিচারের জন্যে আদালতে আবেদন করেছেন।

আবিরের মৃত্যুর পর, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ভিসির স্ত্রী মামলা করলেও ময়না তদন্ত রিপোর্ট, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মোবাইল ফোনের কললিস্ট, লোকেশনসহ সিআইডির গোপন তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে আবিরের মৃত্যু রহস্য। সিআইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে একটি মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবিরকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন তার মা নাসিমা আকতার। ফলে মায়ের ওপর অভিমান করেই আবির আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। তবে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আবিরের মা মামলাটি পুন:বিচারের জন্যে আদালতে আবেদন করেছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটির পুন:বিচারের আবেদন কেনো মঞ্জুর করা হবে না জানতে চেয়ে ২৫ আগস্টের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জানাগেছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে ঢাকার হাতিরঝিলের পানিতে ডুবে মারা যান যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের প্রফেসর (যবিপ্রবির সাবেক ভিসি) ড.আবদুস সাত্তারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে ওয়াসেক সাত্তার আবির। এ ঘটনায় নিহতের মা কলেজ শিক্ষক নাসিমা আকতার বাদী হয়ে ছোট দেবরের ছেলে নয়ন ও জামাই মুরাদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশে মামলাটি প্রথম তদন্ত শুরু করেন ঢাকা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) মাহমুদুর রহমান। কিন্তু কিছুদিন পর বাদী নাসিমা আকতার ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ফলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৪ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমানকে পরিবর্তন করে নতুন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় ঢাকা মেট্রো( দক্ষিণ) সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মামুনুর রশীদকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামনুর রশীদ ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহানগর আদালত-২১ বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সেই প্রতিবেদনে ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা, বাদীর দেওয়া স্বাক্ষী, হাতিরঝিলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ পূর্বক পর্যালোচনা শেষে সিআইডির গোপন তদন্তে বেরিয়ে আসে সাবেক ভিসিপুত্র আবিরকে হত্যা করা হয়নি। বরং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে একটি মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবিরকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন তার মা নাসিমা আকতার। ফলে মায়ের ওপর অভিমান করেই আবির আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
এমন প্রতিবেদন দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ১৭ মে মামলাটি খারিজ করে দেন। ফলে আবিরের মা মামলাটি পুন:বিচারের জন্যে আদালতে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটি পুন:বিচারের আবেদন কেনো মঞ্জুর করা হবেনা জানতে চেয়ে আদালত আসামি নয়ন ও মুরাদকে ২৫ আগস্টের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিকে নিহতের পিতা যবিপ্রবির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড.আবদুস সাত্তার জানান, মামলাটি পুন:বিবেচনার বিষয়টি তিনি ভাল জানেন না, জানেন তার স্ত্রী। তার স্ত্রী বালিয়াডাঙ্গা খানপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাসিমা আকতার জুঁই জানান, সম্পত্তির লোভে তার দেবর ফজলুর রহমানের ছেলে নয়ন ও জামাই মুরাদ পরিকল্পিতভাবে তার ছেলে আবিরকে হত্যা করে। তিনি জানান, ছেলে হত্যার সঠিক বিচারের জন্যে তিনি মামলাটি পুন:বিচারের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
অপরদিকে বাদীর দেবর ফজলুর রহমান জানান, পৈত্রিক সম্পত্তি ফাঁকি দিতে তার ছেলে ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।